মাত্র সাত-আট বছর আগেও পুতিন ও এরদোগানের গলায় গলায় এমন ভাব ছিল না। ঐতিহাসিকভাবেই রুশ-তুর্কি সম্পর্কে টানাপোড়েন ছিল। তবে সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন এরদোগান।
ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শুভাকাঙ্ক্ষীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন এরদোগান। সমালোচকদের মতে, সাবেক কেজিবি প্রধান পুতিনের কূটকৌশলে ফাঁদে পড়েই মূলত রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বে জড়ান তিনি। খবর দ্য মস্কো টাইমসের।
পুতিন ও এরদোগানের মধ্যে সাধারণ কিছু মিল রয়েছে। এই দুই লৌহমানব নিজ নিজ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। দুজনেই নিজদের বিরোধীদের টুটি চেপে ধরতে সিদ্ধহস্ত।
পুতিন ও এরদোগান দুজনই দুদশক ধরে রাশিয়া ও তুরস্কের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুতিন ১৯৯৯ থেকে নিজেকে রাশিয়ার একক নেতা হিসেবে পরিণত করেছেন। আর এরদোগান ২০০৩ সাল থেকে আধুনিক তুরস্কের রূপকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে অবৈধভাবে তুরস্কের আকাশে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তুরস্ক। তুর্কি নাগরিকদের রাশিয়ায় ভ্রমণে যাওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়। সেই সঙ্গে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানিও কমিয়ে আনা হয়।
এ সম্পর্ক পাল্টে যায় ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই। এদিন সামরিক অভ্যুত্থান হয় তুরস্কে। তবে তা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করে এরদোগানের প্রশংসা করেন পুতিন।
সেই থেকে শুরু। পুতিনের প্রশংসায় গলে যান এরদোগান। রাশিয়ার সঙ্গে শুরু হয় সুসম্পর্ক। বীজ বোনা হয় নতুন কূটনীতির। ধীরে ধীরে রাশিয়ার ওপরে আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এরদোগান সরকার।
পুতিনের ভূয়সী প্রশংসায় কাবু হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ব্যস্ত হয় তুরস্ক। অভ্যুত্থানের এক মাসের মাথায় রাজকীয় এক ভোজে এরদোগানকে সেন্ট পিটার্সবার্গে আমন্ত্রণ জানান পুতিন। এতে আরও বিগলিত হন এরদোগান।
এর পরের বছর রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনে তুরস্ক। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন তুরস্কের এই 'লৌহমানব'।
দুই পক্ষকেই শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়ে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানান তিনি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন এরদোগান।
যুদ্ধের সময় এরদোগানের এই বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তাকে বিশ্বদরবারে সমাদৃত করেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশের কাছেই সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।
এদিকে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে এরদোগানের বিভক্তি তাকে পুতিনের বলয়ে প্রবেশে বাধ্য করেছে।