ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

চাঁদাবাজির কারণে ছাত্র রাজনীতিকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে না : রাষ্ট্রপতি

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০২৩

চাঁদাবাজির কারণে ছাত্র রাজনীতিকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে না : রাষ্ট্রপতি
দখলবাজি ও চাঁদাবাজির কারণে ছাত্ররাজনীতিকে মানুষ এখন সম্মানের চোখে দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ৩ টায় জাহাঙ্গীরনগর  বিশবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তনে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেন, 'প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তবে দুঃখের বিষয়, রাজনীতিতে ক্ষমতা এবং অর্থবিত্তের দাপট নিয়ামক ভূমিকা রাখে। ছাত্ররাজনীতিতে এসব অশুভ ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে। দখলবাজি ও চাঁদাবাজির কারণে এখন ছাত্ররাজনীতিকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে না বরং নেতিবাচকভাবে দেখে। যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ব্যবসা শুরুর পরে চিন্তা করে, কিভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়। তারা নীতি-নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে নিজে বড়লোক হওয়ার চিন্তায় ব্যস্ত থাকেন। খেলাপি ঋণের জন্য সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণ খেলাপি করে। এর সাথে একশ্রেণির ব্যাংকারদেরও যোগসাজস আছে। এছাড়া চাকুরিজীবীরা চাকরিতে ঢুকেই গাড়ি বাড়ির মালিক হওয়ার চিন্তায় বিভোর থাকে। তারা ভুলে যান যে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক। ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দেশ ও জনগণের বড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও সকলকে সচেতন থাকতে হবে।'

রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমাদের তরুণরা যথেষ্ট মেধাবী। তারা বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। এসব তরুণদের যথাযথ পরিচর্যার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।'

গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আমি আশা করি, কর্মক্ষেত্রে তোমরা ন্যায়নীতি ও যুক্তি চর্চা করবে। আমাদের সকলেরই পরিমিত সহিষ্ণু, পরম শ্রদ্ধাশীল ও সংবেদনশীল হওয়া জরুরি। কারণ এসবের মধ্য দিয়েই সমাজ এগিয়ে যায়।'

সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, 'ব্যক্তিস্বার্থ মানুষকে অমানুষে পরিণত হতে প্ররোচিত করে। এছাড়া অর্থলোভী হতে, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং মানবিকতাবোধকে ধ্বংস করতে প্ররোচিত করে। তাই ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে মানুষের প্রতি কর্তব্য এবং সেবার বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা অবৈধভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করে। এছাড়া তারা রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারনীতি ও মৌলিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা গণতন্ত্রবিরোধী, তারা রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী, জাতিবিরোধী, মানবতাবিরোধী আর ঘৃণিত।'

গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, 'আপনারা কোনো কারণেই নিজেদের দুর্নীতিবাজদের দলে অন্তর্ভুক্ত করবেন না। আপনারা অর্পিত দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ সততা, ভালোবাসা, একাগ্রতা ও বিশ্বাস রেখে মানুষকে নিরলস সেবা দিয়ে যাবেন। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করবেন, ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবেন। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন। আপনারা নৈতিকতার মানদ-ে অত্যন্ত শক্ত হবেন এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত ডিগ্রি পেশাগত জীবনে আপনাদের এগিয়ে দেবে। তবে আদর্শবান মানুষ হিসেবে সমাজের অগ্রগতির হাল ধরার জন্য সুগভীর জীবনবোধ আর অনুভূতিশীল মননের বিকল্প নেই।'

সমাবর্তনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নেতৃত্বে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এসে শেষ হয়। পরে বেলা তিনটায় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের নেতৃত্বে আরেকটি শোভাযাত্রা সমাবর্তনস্থলে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক এবং সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেথ্য, এবারের সমাবর্তনে ১৫ হাজার ২২৩ জন গ্রাজুয়েট অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৬ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন, পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮১ জন এবং সাপ্তাহিক কোর্সের (স্নাতকোত্তর) ৩ হাজার ৪৬২ জন। এছাড়াও সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সবগুলো বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

এদিকে সমাবর্তন উপলক্ষে আনন্দে উৎসবে মেতে উঠেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, অমর একুশ ও বটতলাসহ পুরো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের হাস্যোজ্জ্বল পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। এছাড়া দিনব্যাপী কালো রঙের গাউন, টুপি ও কস্টিউম পরে হলের বিভিন্ন জায়গায় ছবি তোলা, সহপাঠীদের নিয়ে দল বেঁধে গল্প করা এবং ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা।