পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজারের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ৯৮০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিরটির শেয়ারহোল্ডাররা প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ হিসেবে নগদ ৯৮ টাকা পাবেন।
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের ব্যবসার ওপর এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। শেষ চার বছরের মধ্যে এটি কোম্পানিটির সর্বনিম্ন লভ্যাংশ ঘোষণা।
এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের একের পর এক রেকর্ড পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করে এ বহুজাতিক কোম্পানিটি।
১৯৮৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পর ২০১৯ সালের জন্য কোম্পানিটি প্রথমবার এক হাজার শতাংশের বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির বড় ধরনের ওই লভ্যাংশের ঘোষণা এমন সময় আসল যখন মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারাবিশ্ব অনেকটাই স্থবির ছিল।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে ২৬ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। এ বন্ধের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের সুখবর দেয় রেকিট বেনকিজার। ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি ১২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।
ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের মোট অঙ্কের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।
ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যে কারণে শেয়ারবাজারের সব থেকে দামি শেয়ারের প্রতিষ্ঠান এটি। ২০১৯ সালে লভ্যাংশ চমক দেখানোর পর ২০২০ সালেও চমক দেখায় কোম্পানিটি। ওই বছর ১৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানিটির লভ্যাংশে এর থেকে বড় চমক অপেক্ষা করছিল ২০২১ সালের জন্য। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।
লভ্যাংশের ক্ষেত্রে পরপর তিন বছর একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টির পর এখন কোম্পানিটির লভ্যাংশে কিছুটা ভাটা পড়লো। অবশ্য ২০১৯ সালের আগের তুলনায় এখনো কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ বেশি রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান রেকিট বেনকিজার ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগের বছর ২০১৭ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ২০১৬ সালে ৭৭৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
নিয়মিত এমন বড় লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ মাত্র ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সে হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বড় লভ্যাংশ দিলেও তার সিংহভাগই নিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা।
অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও বিদেশিদের কাছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।
২০২২ সালের সমাপ্ত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার জন্য রেকিট বেনকিজার বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী ৩০ মার্চ। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ মার্চ। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ১৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭৬ টাকা ৮০ পয়সা।