ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, জুন ১৭, ২০২৪ |

EN

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘তৃতীয়পক্ষ’ বন্ধের নির্দেশ

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৩

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘তৃতীয়পক্ষ’ বন্ধের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশিকর্মী নিয়োগে তৃতীয়পক্ষের (এজেন্ট) হস্তক্ষেপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে আসতে নেপালের শ্রমিকদের খরচ মাত্র ৩ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত। কিন্তু বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকদের বেলায় প্রত্যেককে খরচ করতে হয়, ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার হাজার রিঙ্গিত। প্রধানমন্ত্রী এই খরচকে ‘আধুনিক দাসত্বের’ সমতুল্য বলেছেন।

এ ধরনের স্বীকারোক্তি মালয়েশিয়া সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা বিদেশি কর্মীদের বর্ধিত খরচের জন্য রিক্রুটিং এজেন্টদের ফি-কে দীর্ঘদিন ধরে দায়ী করা হচ্ছে।

এজন্য শ্রমিকদের প্রায়ই উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বা নিয়োগের ফি দিতে তাদের ঋণ করতে বা জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য করা হয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা অভিবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চ খরচ হওয়াকে দাসত্বের শ্রম বা ফোর্স লেবার এবং মানবপাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এই দুটি অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে আমেরিকা ও ইউরোপের মার্কেটে মালয়েশিয়ান পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

বেশ কয়েকটি স্থানীয় হ্যান্ড গ্লোভ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের বর্তমান এবং সাবেক বিদেশি কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ফেরত দিয়ে সে অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কেননা কোম্পানি ও কর্মী উভয়ই এই উচ্চ খরচের পদ্ধতি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বাংলাদেশ ও নেপালের সরকারের সঙ্গে অভিবাসন খরচ ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। কীভাবে সহজ পদ্ধতি ও নামমাত্র খরচে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন।

মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তারা নামমাত্র বা জিরো খরচে কর্মী নিয়োগ করার ইচ্ছা বিভিন্ন সময় সরকারকে বলেছে। তারা নিশ্চয়তা চেয়েছে যে, উৎস দেশ (বাংলাদেশে) কর্মীর অতিরিক্ত কোনো খরচ হবে না।

গত ফেব্রুয়ারিতে, তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান নিয়োগকর্তাদের বলেছিলেন, যারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চান তারা তৃতীয়পক্ষের নিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে না করে সরাসরি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে।

সে সময় সারাভানান বলেছিলেন, নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে করা আবেদনগুলো অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করা হবে। ২০১৮ সালে, তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারন বলেছিলেন, মন্ত্রণালয় নিয়োগকারী এজেন্টদের ভূমিকা পর্যালোচনা করবে।

সবশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রত্যাবর্তন বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। মালয়েশিয়া যেখানে উভয় দেশের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির কাজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে যেটা জি টু জি প্লাসের সময় কেবল বাংলাদেশ প্রান্তে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।

জি-টু-জি প্লাসের সময় মাত্র ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠিয়েছে। এবার শ-খানেক রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করছে কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই সমঝোতা স্মারকে উল্লিখিত উভয় দেশের সম্মতিতে করা অভিবাসন খরচের সীমানা অতিক্রম করেছে।

কোনো সরকারই এর লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। বরং বর্তমানে বেশি অভিবাসন খরচের মাত্রা জি-টু-জি প্লাসের সময়কেও ছাড়িয়ে গেছে। এবারও সরকারকে ফাঁকি দিয়ে লাগামহীন খরচ আদায় করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী আগমনের পরিমাণ নেপালের তুলনায় খুবই কম।

মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বেশি খরচের কর্মী এনে দাসত্বের শ্রম বা জোর জবরদস্তির শ্রম, মানবপাচার এবং অর্থ ফেরত পাঠানোর দায় নিতে ইচ্ছুক নয়। এমন কি খরচের অর্থ ফেরত পেতে অনেক কারখানার বাংলাদেশি কর্মীদের অসন্তোষের ঘটনা ঘার কারণে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা, অতিরিক্ত খরচের খড়গ হতে কর্মীরা রেহাই পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়া মর্যাদাবান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।