এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ জাপানে থাকা তার ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে বাংলাদেশে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে দু’টি রিট শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
এর আগে দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করাতে রিট করেছিলেন জাপান থেকে আসা শিশুদের মা ডা. এরিকো নাকানো। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মেয়েকে হাজিরের পর এখন গুলশানের একটি ভাড়া বাসায় দিন-রাত পাল্টাপাল্টি করে এরিকো ও শরীফ মেয়েদের দেখাশোনা করছেন বলে জানা গেছে।
এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে ৩টি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।
তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (০৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে।
পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়াবাসায় নিয়ে যান। ৪ দিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্র্বতীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালত গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় সবাইকে আলাদা কক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন। পাশাপাশি সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু উভয়পক্ষের আইনজীবী কয়েকবার বৈঠক করেও সমঝোতায় আসতে পারেননি। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মেয়েদের এরিকোর সঙ্গে গুলশানের বাসায় থাকার আদেশ দেন। আর বাবা ইমরান শরীফ দিনের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা ও সময় কাটাতে পারবেন। একইসঙ্গে ২১ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন।
এর মধ্যে ছোট মেয়েকে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করলেন ইমরান শরীফ। পাশাপাশি এ রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ছোট মেয়েকে তার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনাও চেয়েছেন।