ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ই-অরেঞ্জের প্রতারণায় অভিযুক্ত রাজধানীর বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক সোহেল রানা জামিন পেয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দেওয়ার শর্তে তাকে জামিন দেন আদালত।
তবে জামিন পাওয়ার পরই তিনি আবারও পালিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হাজিরা দিচ্ছেন না থানায়ও। বিষয়টি রোববার (২২ জানুয়ারি) কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
এর আগে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ সদরদপ্তর। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক ই-অরেঞ্জের সোহেল রানাকে সাজা দিয়েছেন ভারতের একটি আদালত। তিনি পশ্চিমবঙ্গের আলীপুরের প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে আছেন বলেও ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এর মধ্যেই সোহেল রানার জামিন নিয়ে পালানোর তথ্য জানালো ভারতের পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিবেদনের এ তথ্য ৪২ দিন আগের খবর। এর মধ্যেই জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন সোহেল রানা। কোচবিহার জেলার পুলিশ সুপার সুমিত কুমার এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশটির পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার সাজা ঘোষণা করেন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। এরপর থেকে কলকাতা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ছিলেন অভিযুক্ত সোহেল রানা। কিন্তু জেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জামিন আবেদন করেন তিনি। মেখলিগঞ্জ থানায় প্রতি সপ্তাহে সশরীরে হাজিরা ও মেখলিগঞ্জ থানা এলাকার বাইরে না যাওয়ার শর্তে গত ৮ ডিসেম্বর তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
পুলিশ আরও জানায়, এরপরই থানায় সশরীরে হাজিরা দেওয়ার পরিবর্তে মাত্র একবার তিনি ই-মেইল করেন। ই-মেইল বার্তায় সোহেল জানান, শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু কাগজও থানায় ই-মেইল করেন তিনি। কিন্তু তার অবস্থান সম্পর্কে জানাননি কোনো তথ্য। এরপরেই চলতি জানুয়ারি মাসে সোহেল রানার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত নন বলে হাইকোর্টের প্রতিবেদন দিয়েছে মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ।
গত বছরের ৭ এপ্রিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। তখন অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন আদালত। এছাড়া এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করা হয়।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত বছরের ৩ এপ্রিল ৭৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তারেক আলম নামে এক ব্যক্তিসহ ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার ৫৪৭ গ্রাহক। রিটে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাওয়া হয়।
গ্রাহকদের পক্ষে ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম রিট আবেদনটি দায়ের করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।