ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স আসা অর্ধেকে নেমেছে

অর্থ ও বানিজ্য ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১০, ২০২৩

মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স আসা অর্ধেকে নেমেছে

ফাইল ছবি

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। হুন্ডি বা অবৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স পাঠানোকে এ পতনের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। রেমিট্যান্স বাড়াতে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোয় উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা বাড়ানোসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছে হাইকমিশন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে হাইকমিশন থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশেরও বেশি। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির চতুর্থ প্রধান গন্তব্য মালয়েশিয়া। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় ১০ শতাংশ এসেছে দেশটি থেকে।

হাইকমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের অন্যতম উৎস মালয়েশিয়া থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ২ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে হুন্ডি তথা অবৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণের প্রবণতাকে দায়ী করা যায়।

মালয়েশিয়া থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে হাইকমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে। একই সঙ্গে হুন্ডি বন্ধে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা যুক্তিসংগত। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তির নামে প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো করে ব্যাংক হিসাবে জমা রেখে পরবর্তীতে লভ্যাংশসহ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীরা আরও উৎসাহিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হাইকমিশনের মতে, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে টাকার দর এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশের কোম্পানির দর ওই দেশের হুন্ডি রেটের সমান বা বেশি হয়। প্রয়োজনে দেশভিত্তিক টাকা ও ডলারের দর নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আইডি বাধ্যতামূলক না রেখে ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মতো পাসপোর্টের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ড ক্রয়ে ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা লভ্যাংশের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে হাইকমিশন।

অভিযোগ রয়েছে, বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আসে। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন আরও কঠোরভাবে মনিটর করার সুপারিশ করা হয়েছে চিঠিতে। এ ছাড়া প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার ব্যয় মেটাতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মতো স্বল্প সুদে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করে বৈধপথে পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে তা পরিশোধের ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত প্রবাসী যাত্রীদের ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার বহন নিরুৎসাহিত করা এবং হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে শাস্তির দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বর্তমানে ডলারের দাম খোলাবাজারে বেশি। ফলে বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে বিনিময় মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এটা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বিভিন্ন রেট পরিহার করার পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক বিশেষ অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডিজিটাল হুন্ডির কবলে পড়ে বৈধ পথে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। হুন্ডি কারবারিরা এ জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছে।

সূত্র: সমকাল