Can't found in the image content.
নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, অক্টোবর ১৩, ২০২১
সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অবৈধভাবে কিডনি কেনা-বেচার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা শাহরিয়ার
ইমরানসহ এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার
মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতেন তাঁরা। তাদের প্রধান টার্গেট নিম্নআয়ের মানুষ। যারা
ঋণগ্রস্ত ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত তাদের টার্গেট করে কার্যক্রম চালাত চক্রটি। গতকাল
সোমবার ঢাকা ও জয়পুরহাটে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ
মঙ্গলবার সকালে কারওয়ানবাজর র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য
জানান, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তাররা
হলেন, মূল পরিকল্পনাকরী শাহরিয়ার ইমরান (৩৬), মেহেদী হাসান (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৮),
আবদুল মান্নান (৪৫) ও তাজুল ইসলাম (৩৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি পাসপোর্ট, পাঁচটি
মোবাইল, বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার
আল মঈন জানান, এই চক্রটি মানবদেহের কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে
সক্রিয় ছিল। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের কার্যক্রম চক্রের
সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।
র্যাব
কর্মকর্তা বলেন বলেন, কিডনি কেনা-বেচা করত চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য। তারা তিনটি
ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করেন। প্রথম দল ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি
রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে দ্বিতীয় দল, চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল
থেকে গরিব ও অভাবী মানুষের চিহ্নিত করে। এরপর তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে
অর্থের বিনিময়ে কিডনির ডোনারকে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে তৃতীয় একটি
গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে
কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন
করে। ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা
নিশ্চিত হওয়ার পর তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী
ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী
দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের
এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ
যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে বিমান ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের
সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করত।
র্যাবের
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চক্রটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীর কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০
লাখ টাকা গ্রহণ করে। পরে কিডনি ডোনার কে তিন থেকে চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়।
দুই লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করত। পরে তাদের প্রতিশ্রুতি অর্থ না দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন
করে বাকি টাকা দিত না। চক্রের মূল হোতা ইমরান ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল
প্রতি কিডনিদাতার গ্রহণ বাবদ পর্যায়ক্রমে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হতো। চক্রটি আইনের
হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনো প্রকার রসিদ তারা রাখত না।
চক্রের
মূল হোতা শাহরিয়ার ইমরান পার্শ্ববতী দেশের কিডনি পাচার চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ
রাখতেন। অর্থাৎ সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় 'বাংলাদেশ কিডনি
ও লিভারের চিকিৎসা সেবা' এবং 'কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা' নামে দুটি পেজের অ্যাডমিন
ছিলেন।
এ
চক্রের অন্যতম সদস্য আব্দুল মান্নান কিডনি ডোনারদের অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করেন এবং
তাজুল ইসলাম তাঁর সহযোগী হিসাবে কাজ করেন। আর আসামি সাইফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান বিদেশে
যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যবস্থা করে দিতেন।