বছরের প্রথম দিনটি কবি জসীম উদ্দীনের জন্মদিন। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। বাবা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন আর মা আমিনা খাতুন গৃহিনী।
খুব অল্প বয়সেই লেখালেখির প্রতি অন্তপ্রাণ ছিলেন জসীম উদ্দীন। শিক্ষাজীবন ফরিদপুরে শুরু হলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এম এ পাশ করেন।
তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলো 'রাখালী' (১৯২৭)। তার প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯), বালুচর (১৯৩০) , ধানক্ষেত (১৯৩১) , সোজনবাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩), হাসু (১৯৩৮), মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩) ইত্যাদি।
তার কবিতায় আবহমান বাংলাকে পাওয়া যায়। এ জন্যই তিনি পল্লীকবি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। একাধারে তিনি কবি, ঔপন্যাসিক ও গীতিকার। তার ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ১৯৪০ সালের মধ্যেই একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়ে আজ বিশ্ববিখ্যাত। তার ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ১৯৬৯ সালে ইউনেস্কোর অনুবাদ প্রকল্পের গ্রন্থ হিসেবে অনূদিত হয়েছে।
জসীম উদ্দীনের অধিকাংশ রচনায় গ্রাম্য জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, রাখালের প্রতি তার অসম্ভব মমতা লক্ষ্য করার মতো। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবন অসামান্য দরদে উপস্থাপন করেছেন। তিনি সবসময় নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিশীল।
লেনিন, সোভিয়েত দেশ ও সমাজতন্ত্রের প্রতি কবির গভীর শ্রদ্ধা ছিলো। জসীম উদ্দীন সোভিয়েত রাশিয়ায় ভ্রমণে খুব উদগ্রীব ছিলেন যান। তার সে আশা পূর্ণ হয়েছিলো। সোভিয়েত ভ্রমণ করে মুগ্ধ কবি বলেছেন, ‘ইস্ আমার বাংলাদেশে যদি এমন ব্যবস্থা থাকতো সকলে সোভিয়েত দেশের মতো সুখে থাকতো’।
জসীম উদ্দীন ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ি তাকে কবর দেওয়া হয়েছে ফরিদপুরে প্রিয় দাদির কবরের পাশে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এক প্রবন্ধে লিখেন- তার কাব্যের আবেগের, ভাষার চিত্রকল্পের অকৃত্রিমতা মন জয় করে নিলো আধুনিকমনা বাঙালি পাঠকের, বিদগ্ধ ইউরোপীয়দের। জসীম উদ্দীনের আবির্ভাবের পর আধুনিক বাংলা কবিতার কোনো যোগ্য সঙ্কলনে তাকে অবহেলা করা অসম্ভব ছিলো। (জসীম উদ্দীন: মানুষ ও কবি)