ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হীরাবেন মোদি মারা গেছেন। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
এরপরই মা হীরাবেন মোদিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘গৌরবময় একটি শতাব্দী এখন ঈশ্বরের পায়ের কাছে... মায়ের মধ্যে আমি সর্বদা তিনটি বিষয় অনুভব করেছি। যার মধ্যে রয়েছে- একজন তপস্বীর যাত্রা, নিঃস্বার্থ কর্মযোগীর প্রতীক এবং মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জীবন।’
মায়ের মৃত্যুর পর শুক্রবার সকালে হীরাবেন মোদির একটি ছবি শেয়ার করে গত জুন মাসে তার ১০০ তম জন্মদিনে সাক্ষাতের সময় তিনি কী বলেছিলেন তা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি তার ১০০ তম জন্মদিনে তার সাথে দেখা করি, তখন তিনি একটি কথা বলেছিলেন যা সর্বদা মনে রাখা হয়। এগুলো হচ্ছে- বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করুন, বিশুদ্ধতার সাথে জীবনযাপন করুন, অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করতে হবে এবং বিশুদ্ধভাবে জীবনযাপন করতে হবে।’
এদিকে মায়ের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে গুজরাটের গান্ধীনগরে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আহমেদাবাদের ইউএন মেহতা হাসপাতালে হীরাবেন মোদিকে গত মঙ্গলবার রাতে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গান্ধীনগরে।
হীরাবেন গান্ধীনগরের কাছে রায়সান গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই পঙ্কজ মোদির সঙ্গে থাকতেন। গুজরাট সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদিও প্রায় সময়ই তাকে দেখতে যেতেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদি শুক্রবারের নির্ধারিত অফিসিয়াল প্রোগ্রামগুলোতে যোগ দেবেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ এবং উৎসবগুলোতে মায়ের আশীর্বাদ পেতে মায়ের কাছে ছুটে যেতেন। গত ১৮ জুন হীরাবেন মোদির বয়স ৯৯ বছর হওয়ার পর মোদি লিখেছিলেন, তার জীবন এবং আত্মত্যাগ তার মন, ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাসকে ‘গড়ে’ দিয়েছিল।
মোদি সেসময় লিখেছিলেন, ‘আমার মা যতটা সরল, ততটাই অসাধারণ। ঠিক সব মায়ের মতোই।’
বিবিসি বলছে, মোদি ও তার মাকে শেষবার গত ৪ ডিসেম্বর জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল। সেসময় প্রধানমন্ত্রী মোদি তার নিজ রাজ্য গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের সময় তার বাড়িতে গিয়েছিলেন।
ভারতীয় এই প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে থাকলেও মা হীরাবেন মোদির ছোট ভাই ও তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ১৯২৩ সালে গুজরাটের মেহসানা জেলার ভিসনগরে জন্মগ্রহণ করেন হীরাবেন। মোদি লিখেছিলেন, ‘তার শৈশব কেটেছিল দারিদ্র্য এবং বঞ্চনার মধ্যে।’
বেশ অল্প বয়সে দামোদরদাস মুলচাঁদ মোদির সঙ্গে হীরাবেনের বিয়ে হয় এবং এরপর নিজের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভাদনগর শহরে চলে যান তিনি।
নরেন্দ্র মোদি তার ব্লগে লিখেছিলেন, ‘ভাদনগরে আমাদের পরিবার একটি ছোট বাড়িতে থাকত যেখানে একটি জানালাও ছিল না। আর টয়লেট বা বাথরুমের মতো বিলাসিতা ছেড়েই দিন।’
মোদি তার মাকে সময়নিষ্ঠ, পরিপাটি এবং কঠোর পরিশ্রমী হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘কাজ করার সময়, তিনি তার প্রিয় ভজন এবং স্তুতিগান গাইতেন।’
হীরাবেন কখনোই সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি লিখেছিলেন, তিনি তার সাথে শুধুমাত্র দু’টি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। যার দ্বিতীয়টি ছিল ২০০১ সালে, যখন তিনি প্রথমবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
মোদি লিখছেন, ‘তারপর থেকে, তিনি কখনও আমার সাথে আর কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে যাননি।’
নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেও মা হীরাবেন দুই বছর পরে দিল্লিতে তাকে দেখতে আসেন। মোদি তার অফিসিয়াল বাসভবনের চারপাশে মাকে দেখানো নিজের ছবি টুইট করেছিলেন।