পতনের বৃত্তে আটকে যাওয়া দেশের শেয়ারবাজার টেনে তুলতে কোনো পদক্ষেপই যেন কাজে আসছে না। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতন হলো শেয়ারবাজারে। টানা দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজার অব্যাহত রয়েছে লেনদেন খরা।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরে টানা দরপতন ও লেনদেন খরা দেখা দিলে শেয়ারবাজার ভালো করতে সম্প্রতি একাধিক বিষয়ে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারের জন্য আরও একটি সুখবর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেয়ারবাজারে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমার বেশি রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরপরও পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি শেয়ারবাজার। দরপতন এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে আগ্রহী ক্রেতার দেখা তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাড় দেওয়ার পর মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। কিন্তু দিন শেষে পতন দেখতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
বুধবারও (২১ ডিসেম্বর) লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। কিন্তু লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে পতনের তালিকা। ফলে মোটামুটি বড় দরপতন দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন। ফলে টানা ছয় কার্যদিবস পতন দেখতে হলো শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের।
মূল্যসূচকের পতনের সঙ্গে বড় হয় দাম কমা প্রতিষ্ঠানের তালিকা। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৩টির। আর ২০৩টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘরেই আটকে আছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মুন্নু অ্যাগ্রো, বসুন্ধরা পেপার, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং বেক্সিমকো ফার্মা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫২টির এবং ৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।