২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাযজ্ঞকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ২০০৯ সালে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।’ তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মীদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলারও নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দফতরে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি সেই ঘটনায় শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখতে বিজিবি সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড যেকোনও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।...একটা কথা মাথায় রাখবেন। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’
শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ইমানের সাথে কাজ করো; সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ সব ধরনের সুযোগ পাবে। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।’
বর্ডার গার্ড আইন ২০১০ পাসের পর এই বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গঠন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে।’
একটি পেশাগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নেই উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যেকোনও পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ’’-এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষের জন্য একটা ঠিকানা গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি সবার হাতে আজকে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ফ্রিল্যান্সিং, তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ, সর্বক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে এই মন্দা না আসে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও কাছে হাত না পেতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে আমরা নিজেরা নিজেদের মতোই চলবো, মাথা উঁচু করে চলবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কারণেই আমি আহ্বান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, প্রতিটি ইঞ্চিতে যে যা পারেন তা উৎপাদন করবেন।’ প্রতিটি বিওপিতেই আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা কিছু না কিছু উৎপাদন করছেন বা পশুপাখি পালন করায় তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
জাতির পিতার স্বপ্নপূরণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ই-ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে।’
দেশকে আরও এগিয়ে নিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান অর্থাৎ এই ভূখণ্ড এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পেতে পারে সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সে জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজও আমরা শুরু করেছি।’