বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে ২৫২ জনে, সেই সঙ্গে এখনও নিখোঁজ আছেন ৩১ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩৭৭ জনকে এবং ব্যাপক প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পে বাস্তুচ্যুত লোকজনের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭ হাজার ৬০ জনে।
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ২০ মিনিটের দিকে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পশ্চিম জাভায় ব্যাপক প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পটি হয়। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
পশ্চিম জাভার পর্বতবেষ্টিত শহর চিয়ানজুর ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হওয়া এই ভূকম্পের কম্পণ ৭৫ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত রাজধানী জাকার্তাতেও অনুভূত হয়েছে।
১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী প্রবল কম্পনে সিয়ানজুরের আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে, এ সময় বহু ভবন ধসে পড়ে।
রাতেই সিয়ানজুরের এক হাসপাতালের পার্কিং এলাকা আহতদের ভিড়ে ভরে যায়, অনেককে সেখানেই অস্থায়ীভাবে তৈরি তাঁবুতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা কর্মীরা টর্চের আলোতে আহতদের ক্ষত সেলাই করেন।
স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সেই হাসপাতালের পার্কিং এলাকার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে।
ভূমিকম্পে সিয়ানজুর ও জাকার্তাসহ অন্যান্য শহরে ২ হাজার ২ শ’র বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা সংস্থা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি জাকার্তায় কয়েক সেকেন্ড ধরে অনুভূত হয়েছে। এ সময় নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার দপ্তরগুলো থেকে কিছু লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা সংস্থার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিয়ানজুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ও একটি মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যোগাযোগও বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানতে কর্মকর্তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে সিয়ানজুর শহরের ক্ষয়ক্ষতির নানা চিত্র।
২৭ কোটি মানুষের দেশ ইন্দোনেশিয়া তথাকথিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার (প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার) ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলটিতে ভূত্বকের কয়েকটি পৃথক টেকটোনিক প্লেট এসে মিলিত হওয়ায় এখানে ঘন ঘন ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো ঘটনা ঘটে।
জাকার্তার আইনজীবী মায়াদিতা ওয়ালও বলেন, অফিসে কাজ করার সময় হঠাৎ টের পেলাম পায়ের নিয়ে মেঝে থরথর করে কাঁপছে। প্রথমে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝার চেষ্টা করি কী হচ্ছে। কিন্তু কম্পন বাড়তে থাকে এবং বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে তা ছিল।
আহমাদ রিদওয়ান নামে এক অফিস-কর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, জাকার্তায় এমনিতে আমরা ভূমিকম্পের অভ্যস্ত, কিন্তু আজ মানুষ খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। আমরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।
চিয়ানজুরের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারমান সুহারমান সাংবাদিকদের বলেন, এখনও ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে পড়া সবাইকে উদ্ধার করা যায়নি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুহারমান।
ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে আটকাপড়াদের উদ্ধারের চেষ্টায় দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা রাতভর কাজ করেছেন, এখনও তাদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে ।
যে এলাকাটিতে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে সেটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং ভূমিধস প্রবণ। যে সব বাড়ির অবকাঠামো দুর্বল ছিল সেগুলো ধসে পড়েছে।