আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে চেয়ে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান ও গৌরবময় করার জন্য আমি আজ প্রেসিডেন্ট পদে আমার প্রার্থিতা ঘোষণা করছি।
আগামী নির্বাচনে জিতলে ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি ভিন্ন ভিন্ন দুটি মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতের ভাষণে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, সাম্প্রতিক মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার দলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এর ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করেননি তিনি। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার নিয়ে ট্রাম্প যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিছিলেন, তা থেকে এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনেও রিপাবলিকান প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার দায় নিজের ঘাড়ে নেননি সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বরং বলেছেন, আমাদের দেশ যে বেদনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার সম্পূর্ণ মাত্রা ও চাপ এখনো উপলব্ধি করতে পারেননি ভোটাররা।
এরপরে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০২৪ সালের ভোট হবে ‘অনেকটাই আলাদা’।
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অনেক আশা জাগিয়েও মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি রিপাবলিকানরা। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের দখলও এখনো নিশ্চিত হয়নি। নির্বাচনে ট্রাম্প-সমর্থিত বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী হেরে গেছেন। এতে দলের ভেতর সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রভাব কিছুটা হলেও মলিন হয়েছে। তাছাড়া, রন ডিসান্টিসের মতো তরুণ নেতাদের উত্থানেও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ট্রাম্প।
প্রার্থিতা ঘোষণার সময় তিনি বলেছেন, এখন থেকে ২০২৪ সালে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত... আমি এমনভাবে লড়বো, যেভাবে কেউ কখনো লড়েনি। আমরা কট্টর বামপন্থি ডেমোক্র্যাটদের পরাজিত করবো, যারা আমাদের দেশকে ভেতর থেকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময় হোয়াইট হাউজ থেকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বহু নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ বাইডেন প্রশাসনের। তার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধারও করেছেন গোয়েন্দারা। এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে নিজেকে দোষীয় নয়, বরং ‘ভুক্তভোগী’ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তকে ‘বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।
এর আগে, গত ৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে ওহাইওতে এক রাজনৈতিক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, ১৫ নভেম্বর ‘বড় ঘোষণা’ দিতে চলেছেন তিনি। তখনই ধারণা করা হচ্ছিল, এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতার কথা জানাবেন রিপাবলিকান নেতা।
এর মধ্যে, চলতি সপ্তাহে ছিল ট্রাম্পের ছোট কন্যার বিয়ে। সেই অনুষ্ঠানেও সাবেক প্রেসিডেন্টকে খুব একটা হাসিখুশি দেখা যায়নি। বড় কোনো চিন্তা কাঁধে ভর করে রয়েছে, তাকে দেখে অনুমান করেছেন অনেকেই। অবশেষে মঙ্গলবার সেই ভার নামিয়ে দিলেন ট্রাম্প। তবে চ্যালেঞ্জ এখানে শেষ নয়, বরং শুরু।
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়েই মূলত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আর সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে অপেক্ষায় রয়েছেন বেশ কিছু রাজনীতিবিদ।
রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। পরবর্তী নির্বাচনের সময় তার বয়স হবে ৭৮ বছর। ফলে দলের মধ্যেই মনোনয়নপ্রত্যাশী একটি অংশের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন তিনি। আর এই মনোয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এমন নেতারাও রয়েছেন, যারা একসময় ট্রাম্পের অনুসারী ছিলেন।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি