বাংলাদেশ ইন্ডাসট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) এর এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ এনে আলোচিত পিকে হালদার, শাহ আলম ও রহুল আমিনকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এমপি। কোম্পানি থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত আনাার দাবিও জানান তিনি।
রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় দলীয় কার্যালয়ে বুধবার আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব দাবি করেন।
শিগগির বিআইএফসি’র বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম দিয়ে কোম্পানির মূল মালিকদের সমন্বয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে তাদের হাতে মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিও জানান মেজর অব, মান্নান।
বাংলাদেশ ইন্ডাসট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমি গত প্রায় ৪৮ বছর যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সাথে বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছি। রপ্তানীমুখী পোশাক শিল্পে আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থান এর ভিত রচনায় আমার যে অবদান তা দলমত নির্বিশেষে সর্বমহল স্বীকৃত। আমার ব্যবসার শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল কিভাবে আমার দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো যায়। সেই লক্ষ্যে আমি ১৯৯৮ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এর অনুমোদনক্রমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দু’টি কোম্পানি, হংকং ভিত্তিক একটি কোম্পানি এবং আমার মালিকানাধীন কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইনান্স কোম্পানি লি. (বি.আই.এফ.সি) নামে লিজিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি বিদেশী কোম্পানির শেয়ার রয়েছে প্রায় শতকারা পঞ্চাশ ভাগ। আমার মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পাবলিক শেয়ার রয়েছে প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ।
পি. কে হালদার বিআইএফসিকে গ্রাস করার জন্য সুকুজা ভেঞ্চার নামে ১টি ভুয়া কোম্পানি তৈরি করে। পুঁজিবাজার থেকে বি.আই.এফ.সি শতকরা ৫ ভাগ শেয়ার কিনে জি.এম. শাহ আলমের সহায়তায় বি.আই.এফ.সিতে ২জন পরিচালক নিয়োগ করেন। এখান থেকেই বি.আই.এফ.সি-র পতন শুরু হয়। ৯৫ শতাংশ বিআইএফসির মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হলেও মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ার কিনে অবৈধপন্থায় পি.কে হালদারের সহযোগী শাহ আলম ও রুহুল আমিন পরিচালক হয়ে পুরো কোম্পানি কুক্ষিগত করে। তিনজন মিলে কোম্পানির এক হাজার কোটি টাকা লোপাট করে কোম্পানিটাকেই আজ দেউলিয়ার পথে নিয়ে গেছে।
মেজর মান্নান বলেন, পি.কে হালদারের দুই পরিচালক শাহ আলম ও রুহুল আমিন বি.আই.এফ.সির বোর্ডে দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন এবং পাতানো খেলা অনুযায়ী ৪২টি ঋণের ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে যান। নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাদেরকে বি.আই.এফ.সির ৫১৭ কোটি ঋণ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে নিয়ে আসেন। তবে ৪২টি ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে এ আটকা পড়ে, আমরা অভিযুক্ত ঋণের কোনো বিবরণ খুঁজে পেলাম না। আসল ঋণ কত বা কত টাকা ফেরৎ পেলাম, কিছুরই কোন হদিস না পেয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে বোর্ডের পক্ষে ঋণের বিতরণকৃত সব টাকা আদায়ের অঙ্গীকার নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের অভিযোগের জবাব দিলাম। পরবর্তীতে আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ৫১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে বি.আই.এফ.সিতে পি.কে হালদারের দোসর রুহুল আমিন বি.আই.এফ.সির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এনবিএফআই জি.এম শাহ আলম, শাহ আলমের ভগ্নিপতি কামরুজ্জামান, হঠাৎ করে বি.আই.এফ.সির হেড অব বিজনেসের পদ দখল করে নেন। বি.আই.এফ.সির আমার দীর্ঘদিনের ম্যানেজমেন্টের এমডি থেকে সব সিনিয়র লোকজনদের বাংলাদেশ ব্যাংক এর এক আদেশে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মেজর মান্নান দুঃখ করে বলেন, পিকে হালদার ও তার দোসররা বিআইএফসির ১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ২০২০ এর ডিসেম্বরে শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসে এবং ১ হাজার কোটি টাকা লোকসান দেখায়। পিকে আলাদার ও তার সহযোগীরা বিআইএফসিকে লিকুইডিশনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। কিন্তু আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিকউডিশন প্রক্রিয়া স্থগিত করি। বাংলাদেশ ব্যাংক বিএফআইসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে এবং আমি ৩ বছরের মধ্যে বিআইএফসিকে একটি লাভজন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করি। কিন্থু রহস্যভাবে আমার সেই প্রস্তাব বিআইএফসিতে পৌছায় এবং পরের দিনই পিকে হালদারের বোর্ড এর সহায়তায় আমার নামে দুদককে দিয়ে ২টি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করানো হয়।
এদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিআইএফসির একজিন বিদেশী শেয়ার হোল্ডারের আবেদনক্রমে হাইকোর্ট পিকে হালদারের বোর্ড বাতিল করে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন। কিন্তু সেই বোর্ডকেও কাজ করতে দিচ্ছে না তারা।
আলোচিত পিকে হালদার ভারতে গ্রেফতার থাকলেও তার দোসর শাহ আলম ও রুহুল আমিন বিএফআইসিকে দেনায় ফেলে বিদেশে টাকা পাচারসহ কোম্পানির টাকায় অফিস, বাসাবাড়িতে আলিশান জীবন যাপন করছেন। শাহ আলম ও রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা হলে বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনাসহ আত্মসাৎকৃত এক হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে। একইসাথে ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকদের কাছে বিএফআইসিকে ফিরিয়ে দেয়া হলে কোম্পানিটিকে তিন বছরের মধ্যে দেউলিয়ার হাত থেকে বাচানো সম্ভব হবে।