বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন আর কোনো নির্বাচন নির্বাচন খেলা হবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারকে সব জায়গা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আপনাদের সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। অন্তঃবর্তীকালীন তত্ত্ববধায়কের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন হবে; সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই হলো আমাদের কথা।
বুধবার বিকেলে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে সমাপনী বক্তব্য (ভার্চ্যুয়ালী) রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বিনা ভোটের সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। চুরি, দুর্নীতির কারণে এসব হয়েছে। রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছে। টাকা পাচার করেছে। খাদ্য শস্য আমদানি কমে গেছে। আমদানি করার জন্য যে পরিমাণ ডলার দরকার সেই পরিমাণ ডলার নেই। রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে। এই সংকটের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ সরকার।
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ৫ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। তার আগে ৬০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। খুন করা হয়েছে অনেককে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমানকে নির্বাসিত করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের আন্দোলন করছি। এই লড়াই শেষ লড়াই। এই লড়াই ব্যক্তির বা দলের জন্য নয়। এই লড়াই জাতিকে রক্ষা করার জন্য।
বাংলাদেশ আবার পরাধীনতার জাঁতাকলে পড়েছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নিন্দুকেরা বলেন বিএনপির জন্ম নাকি ক্যান্টনমেন্টে, গণতন্ত্রের কোনো চর্চা নেই। তাদের অনুরোধ করবো আসুন আজকে বগুড়ায়। দেখুন গণতন্ত্রের কী অভূতপূর্ব চর্চা। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকতে বগুড়ায় প্রথম আমাদের আজকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন শুরু করেছিলেন। পোস্টার ছাপিয়ে মার্কা দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। আজকে আবার সেই চিত্র দেখে আমার মন ভরে গেছে। বিএনপির জন্মই হয়েছিল গণতন্ত্রকে পুনর্জন্ম দেওয়ার জন্য। যে গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ গিলে খেয়ে ফেলেছিল। যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। আজকে ৫০ বছর পরে, আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, এই দেশে আবার আমাকে বলতে হয় যে, আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমার ভোটের, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না, বলেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, ৫০ বছর পরে এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি এ বাংলাদেশ আবার পরাধীনতার জাঁতাকলে পড়েছে। আবার একটি ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার মধ্যে পড়েছে। সেদিন যেমন এই বগুড়ার সন্তান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯ বছর রাজপথে ঘুরে ঘুরে আন্দোলন করেছিলেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, সেই আন্দোলন আজ আবার ঘোষণা করেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আমাদের আজকে যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সারা দেশের মানুষ যে আবার জেগে উঠছে, এই জাগরণ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জনগণের জাগরণের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ এখন প্রমাদ গুণছে। তারা বুঝে গেছে তাদের পায়ের নিচে আর মাটি নেই। তারা বুঝে গেছে এ দেশের মানুষ আর তাদের সঙ্গে নেই। সেই জন্য আজকে তারা ভিন্ন পথে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। তারা আমাদের সংবিধানসম্মত অধিকার যে, আমি সমাবেশ-মিছিল করতে পারবো। জনগণকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো, সেটা লুপ্ত করতে যত রকমের হীন কৌশল আছে সেগুলোকে তারা আজকে ব্যবহার করছে। সমাবেশ করতে দেবে না, বারবার হুমকি। এত হুমকি কারা দেয়? যারা ভেতরে দুর্বল। তাদের গলা অনেক চড়া হয় কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপতে থাকে। এরা হচ্ছে সেই দল। প্রত্যেকটা সমাবেশে তারা পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে দুদিন আগে থেকে। তারা অত্যাচার করেছে, আক্রমণ করেছে—বলেন বিএনপি মহাসচিব।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ। এসময় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা একেএম মাহবুবর রহমান, হেলালুজ্জামান তালুকদার, রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগাঠনিক সম্পাদক এএসই ওবায়দুর রহমান চন্দন, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।