ব্যাংকের আমানতকারীরা খারাপ সময় পার করছেন। আমানত রেখে অনেক কম মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ব্যাংকে টাকা রেখে লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত জুন শেষে আমানতের গড় সুদহার নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, আমানতের সুদহারে ধারাবাহিক কমছে। চলতি বছরের জুন শেষে আমানতের সুদহার কমে দাড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যেখানে মার্চেও এর পরিমাণ ছিলো ৪ শতাংশের উপরে। পাশাপাশি এসময় ঋণের সুদহার ৭ দশমিক ০৯ শতাংশে নেমেছে। মার্চ মাসেও ঋণের গড় সুদহার ছিলো ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। মানুষ নিত্যদিনের ব্যয় মেটাতে ধার করছে। অর্থ জমানোর পরিবর্তে ব্যাংকে রাখা টাকা তুলে ফেলছেন তারা। এর ফলে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমছে। পাশাপাশি আমানতের সুদহার ব্যাপকহারে কমানোর কারণে মানুষ ব্যাংক খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকে ১৪ ধরনের আমানত রাখার সুযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত আসে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) থেকে। এক্ষেত্রে এফডিআর রাখা হয় তিন মাস থেকে তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য।
সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে তা ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এই হার ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির হার থেকে আমানতের সুদের হার বাদ দিলে যা থাকে, সেটাই হচ্ছে প্রকৃত সুদের হার। সে বিবেচনায় বর্তমানে ব্যাংকে আমানত রাখলে ৬ শতাংশ টাকা কমে যাচ্ছে আমানতকারীদের।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। সেখানে আগস্ট শেষে স্থিতি নেমেছে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট দুই মাসে আমানত কমেছে দুই হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। সেখানে দুই মাসে নিট ঋণ বেড়েছে পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।
বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা সংকট চলছে। এতে দেশের রিজার্ভ সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। চাপে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। একই সঙ্গে কমছে আমানতের সুদহার। এসময় ব্যাংকে আমানত রাখতে গেলে গ্রাহকদের টাকা কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আমানত রাখতে আগ্রহী না গ্রাহকেরা। ফলে ব্যাংকগুলোর আমানত কমছে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করে সঞ্চয়পত্রকে। তবে এতে বেশি সুদ দিতে হয় সরকারকে। এজন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা বিধিনিষেধ বেধে দেওয়া হয়। এসব সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগেও আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। এরই মধ্যে আমানতের সুদ হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখার পরিবর্তে খরচ করে ফেলছে। মূল্যস্ফীতির চাপে ঋণ নিয়ে চলছেন তারা।
এছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের মাস আগস্টে যা ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল ৪৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় শেষে যা ছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। গত আগস্ট শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৬২ কোটি টাকা।
সূত্র: অর্থসূচক