টানা তিন কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে আবার বড় দরপতন হয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে।
এর আগে সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার লেনদেন শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা ২৮ মিনিটের মাথায় হঠাৎ ডিএসইতে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট পর ডিএসইতে আবার লেনদেন শুরু হয়। এ দফায় লেনদেন চলে মাত্র ২০ মিনিট। এতে সব মিলিয়ে ডিএসইতে লেনদেন হয় এক ঘণ্টা ৪৮ মিনিট।
লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে ডিএসইর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। অবশ্য তাতে সন্তুষ্ট হয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। লেনদেন বন্ধের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে ওইদিনই বিএসইসি পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে। এ তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পর সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইতে আবারও লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার কারিগরি ত্রুটি নয়, সার্কিট ব্রেকার তোলা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে ডিএসই।
এতে নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর অর্থাৎ বেলা ১১টায় ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করতে না পারার বিষয়ে পরবর্তীতে ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, লেনদেন বন্ধ থাকার জন্য কোন প্রযুক্তিগত ত্রুটি নেই৷ ডিএসই মার্কেট অপারেশন ভুলবশত ৭০টি সিকিউরিটিজের পরবর্তী সব সিকিউরিটিজের সার্কিট ব্রেকার তুলে দেয়৷ ফলে মার্কেট বন্ধ রাখা হয়৷ এই ভুল সংশোধন করে মার্কেট সকাল সাড়ে ৯টার পরিবর্তে ১১টায় চালু করা হয়৷
নির্ধারিতে সময়ে ডিএসইতে লেনদেন শুরু না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ দেখা যায়। মশিউর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ডিএসই বিনিয়োগকারীদের নিয়ে খেলা করছে। ডিএসইর এ ধরনের কার্যক্রম মেনে নেওয়া যায় না। ভুল করে ৭০ কোম্পানির বদলে সব কোম্পানির সার্কিট তুলে নেওয়া এটা আবার কী ধরনের ভুল? ডিএসইর এমন ভুলের জন্য আমাদের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের খেসারত দিতে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত ডিএসইর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে লেনদেন শুরু হওয়ার পর পরই শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দেয়। লেনদেন শুরুর ১৬ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩২ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের পতনের মাত্রা। সেই সঙ্গে বড় হয় দাম কমার তালিকা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির। আর ২৩১টির দাম অপরিবর্তিত। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৩৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৯৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৬৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে নাভানা ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৪ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, বসুন্ধরা পেপার মিল, সোনালী পেপার, ইস্টার্ন হাউজিং এবং কেডিএস এক্সসরিজ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৮৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬২টির এবং ১২১টির দাম অপরিবর্তিত।