তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি আমলে কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে যখন আন্দোলন হয়েছে, বিএনপি তখন মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, মানুষকে হত্যা করেছে। বিদ্যুৎ দেবে বলে তারা শুধু খাম্বা বসিয়েছে। সুতরাং বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার বিএনপির নেই।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ সব কথা বলেন। ড. হাছান বলেন, বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াটের একটি মাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিল যা মাত্র দু’দিন চলেছিল অর্থাৎ দু’দিন চলার পরই সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ বিএনপি আমলে এই খাতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। এ সব কারণে আমি বিএনপিকে বলবো এ নিয়ে কথা না বলে বরং আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখতে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার পথ পরিহার করতে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের আগে দেশের মাত্র ৪০% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিলো, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সেটি আরো কম ছিলো, কিন্তু আজকে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে এবং প্রত্যন্ত গ্রামের ঘরে ঘরে আমাদের সরকার বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন বাড়িতে এয়ারকন্ডিশন ব্যবহার করে, ফ্রিজ-টেলিভিশন তো আছেই। ১৫ কোটি মানুষের মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, থ্রি হুইলারগুলো বৈদ্যুতিক চার্জে চলে। সেখানেও অন্তত শতশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
বৈশ্বিক অবস্থা তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্বে জ্বালানি সংকটের কারণে জার্মানিতে পানি গরম করার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ইউরোপের অনেক দেশেই এ রকম করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় দু-একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাজ্যে জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে এবং খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সেখানে মানুষ কয়েকবেলা না খেয়ে থাকছে। অস্ট্রেলিয়াতে রেশনিং করে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে মানুষকে এসএমএস করে জানানো হয়েছে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য।
এই সংকট সমগ্র পৃথিবীতে এবং বাংলাদেশ তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, সে কারণে আমাদের দেশেও প্রধানমন্ত্রী সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোডশেডিং করতে হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'আশা করি এই পরিস্থিতি সহসা কেটে যাবে। কিন্তু এটি নিয়ে বিএনপি যেভাবে কথা বলছে, সেই নৈতিক অধিকার তাদের নেই।'
ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই জনপদে ১০৭ বছরে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো ৩৩ থেকে ৩৪শত মেগাওয়াট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে সেই সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বিএনপির সমাবেশে বাধা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান বলেন, 'বিএনপির সমাবেশে সরকার কখনো বাধা দেয়নি, আমরা চাই বিএনপি সমাবেশ করুক। ঢাকা শহরেও সমাবেশ হচ্ছে। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করুক, সভা সমাবেশ করুক, গণতন্ত্রকে সংহত করুক। বিএনপি যেহেতু অতীতে বাস, ট্রাক, লঞ্চ পুড়িয়েছে সেজন্য পরিবহণ মালিক শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। খুলনা, বরিশালেও যদি ডাকে সে কারণেই ডাকবে।'
তিনি বলেন, 'এগুলো পেশাজীবীদের, মালিকদের সংগঠন। সেখানে আওয়ামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবাই আছে। বিএনপি নেতারাসহ সবাই মিলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্মঘট করার, কারণ যদি তাদের বাস-লঞ্চ আবার পুড়িয়ে দেয়।'