সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলাতে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। নেতারা বলেন, দুর্ভিক্ষ আর লোডশেডিং হচ্ছেই আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের মডেল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভের অংশ হিসেবে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে (পলওয়েল মার্কেটের সামনে) গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত “সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন”, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ¦গতি ঠেকাও” এবং “রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা বন্ধের” দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে, বিদ্যুৎ নেই, রিজার্ভ কমে এসেছে। জনগণকে চুষে খেয়ে এই সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে।পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। আওয়ামীলীগ যুবলীগসহ দলীয় গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে সারাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের হামলা জুলুম শুরু করেছে। আমরা (গণতন্ত্র মঞ্চ) এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে চাই। আমরা ক্ষমতায় গেলে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখবো। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবো। আমরা ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কার করবো।
সাইফুল হক বলেন, এদেশের জনগণ না খেয়ে মরলেও এই জনসম্মতিহীন সরকারের কিচ্চু আসে-যায় না। এই সরকারের চুরি- দুর্ণীতির বিচার চাইলেই সরকার পুলিশ ও দলীয় গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে বিরাধী শক্তিকে দমনে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। জনগণের টাকায় পরিচালিত পুলিশদের বলি যারা দুর্ণীতি করে অর্থ পাচার করছে, লুটপাট করছে তাদের ধরুন।
সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন, "রিজার্ভ চিবিয়ে খাওয়া হয়নি, জনগণের কাজে লেগেছে" আমরা বলি রিজার্ভ চিবিয়ে খাওয়া যায়না ঠিকই কিন্তু ডলার পাচার করা হয়েছে। সারাদেশে ভয়াবহভাবে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক পরিবর্তিত বাস্তবতার পূর্বেই এই ভোটডাকাতির সরকার লুটপাট, ডলার পাচার, রিজার্ভ চুরি করে বাংলাদেশকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তেদ ঠেলে দিয়েছে। আর এখন দুর্ভিক্ষ আসছে ঘোষণা দিয়ে এর দায় জনগণের ঘাড়ে চাপানোর ফন্দি করছেন প্রধানমন্ত্রী। এই জনসম্মতিহীন সরকার বিদ্যুতের নামে, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ভাই-বেরাদাদের পকেটে ঢুকিয়ে লুট করেছে। এখন দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে। লোডশেডিং আর দুর্ভিক্ষ এই সরকারের উন্নয়নের মডেল। তিনি আরো বলেন, পুলিশ, মালিক সমিতি, দলীয় গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে গুলি, মামলা-হামলা-গ্রেফতার, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী পণ্ড করার চেষ্টা আওয়ামীলীগের ব্যর্থতা ও পরাজয়। গণসংহতি আন্দোলন ও ছাত্র ফেডারেশনের রাজনৈতিক প্রস্তাব পড়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ দিয়ে হল থেকে বের করার চেষ্টায় এই সরকারের নার্ভাস হয়ে পড়া প্রকাশ পায়। সংবিধান সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা, শাসনতান্ত্রিক সংস্কারসহ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চ লড়ছে। আসুন, জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করি। নুরুল হক নূর বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম দিগুণ হয়েছে, সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেইা। ইভিএম দিয়ে এই জনসম্মতিহীন সরকারের ১৪ ও ১৮ সালের মতো আরেকটি জালিয়াতির ভোট করার স্বপ্ন দেশের মানুষ ধুলায় মিশিয়ে দেবে। গণতন্ত্র মঞ্চ পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনবে। প্রশাসনেও হাওয়া ঘুরে গিয়েছে। জনগণের পক্ষে থাকলে কাউকে চাকরি হরাতে হবে না। সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক আধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে চরম খেসারত দিতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েসহ সকল গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। সম্ভাবনাময় দেশকে শেখ হাসিনার সরকার দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশকে রক্ষায় রাজপথে নামুন।’
তানিয়া রব বলেন, ‘এই সরকারের উন্নয়নের ভেল্কিবাজি হলো মানুষের পেটে ভাত নাই, ঘরে বিদ্যুৎ নাই, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা নেই। এরা রাষ্ট্রকে ফতুর করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ, দুর্ণীতি এবং অবৈধ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দুঃশাসনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে এই ভোটডাকাত সরকার।’
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী লুটেরাদের ২২০০ পরিবার সৃষ্টি করেছেন, যারা দেশের টাকা লুট করে ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডায় অর্থ পাচার করছে। দেশ থেকে ৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এদের ধরার কেউ নেই কারণ এরা সরকারের কাছের লোক।’
ইমরান ইমন বলেন, ‘আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বাড়ছে। ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ এর জন্য দায়ী নয়, দায়ী এই লুটপাটকারী সরকার। এরা ডলার পাচার করে; রিজার্ভ চুরি করে। এই লুটেরা রাষ্ট্রের পরিবর্তন করতে বাংলাদেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে । এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হামলা-মামলা বাধাকে জয় করেই এই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। মানুষের জোয়ার আসছে।’
সভাপতির বক্তব্যে কামাল উদ্দিন মজুমদার সাজু বলেন, ‘ন্যায্যতা, সামাজিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচারের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে গণতন্ত্র মঞ্চ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে এই লুটেরা সরকারের বিচার করা হবে। এই সরকারকে উচ্ছেদ করা ছাড়া সেই বিনির্মাণ সম্ভব নয়।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক কামাল উদ্দিন মজুমদার সাজুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সহ সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা জেলা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য বোরহান উদ্দিন রহমান চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জিয়াউর কর্নেল, নাগরিক ঐক্য ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগঠক ফিরোজ হাসান রনি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোঃ সালাউদ্দিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা মিন্টু মিঞা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট নাসিমা রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু প্রমুখ।