বিশ্ব বাজার পরিস্থিতি বর্ণনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, রাশিয়ার তেল সবাই কিনতে পারে না। তেলের দাম বেড়ে গেলে সব কিছুর দাম বাড়ে। দেশের বাজারে সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়নি, নিজ থেকে দাম বেড়েছে।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান ও শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপির সময়ে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ আসতো। তারা চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এখন ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। পেট্রলের দাম বেড়ে গেছে, ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে। এখন একটু লোডিশেডিং হচ্ছে। বিশ্বে ডিজেল-পেট্রলের দাম তিনগুণ হয়েছে। এসব রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য।
মন্ত্রী বলেন, সার ও তেলের দাম তিনগুণ হয়েছে। আমরা তো বিষয়গুলো দেখছি। যুক্তরাজ্যের মতো দেশে ব্যয় বাঁচানোর জন্য মানুষ একবেলা খাবার খাচ্ছে। এজন্য আমাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেটে বন্যায় সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো, কোনো কিছুতেই বিএনপিকে আমরা দেখিনি। জিয়ার আমল থেকে এখন পর্যন্ত আমরা দেখেছি কীভাবে তারা লুটপাট করেছে, ক্ষমতার রাজনীতি করেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আরেকটি ভবন উদ্বোধন করতে পেরে আজ আমি আনন্দিত। প্রতিনিয়ত আমরা চেষ্টা করছি এ হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার। এজন্য চিকিৎসক, নার্স, যন্ত্রপাতিসহ যা যা লাগে আমরা ব্যবস্থা করছি, ভবিষ্যতেও করবো।
তিনি বলেন, আমরা জানি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। কয়েকজন বিপদগামী লোক সেদিন জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে। এ ধরনের অপরাধ পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি, বাংলাদেশে ঘটেছে। জাতির জনকের ক্ষেত্রে তো আরও বিরল। সেদিন শেখ রাসেলের অবুঝ শিশুকেও হত্যা করা হয়েছিল।
জাহিদ মালেক বলেন, এ ইনস্টিটিউট শেখ রাসেলের নামে করা হয়েছ, আমি মনে করি এটি অত্যন্ত ভালো হয়েছে। হাসপাতাল নিয়ে লোকে প্রশংসা করে। আমরা চাই চিকিৎসার মান আরও বাড়ুক। এখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি অপারেশন করা হয়েছে। অনেক ধরনের জটিল অপারেশন হয়েছে। আমি আশা করবো, আপনাদের কাজ আরও বাড়াবেন। বিশেষায়িত চিকিৎসা আছে বলেই লোকে বিদেশে যায়, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এজন্য দোষারোপ করা যাবে না। আজ বিশেষায়িত চিকিৎসা হচ্ছে গ্যাস্ট্রোলি, চক্ষু হাসপাতাল, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে লোকজন আসছে৷
আট বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণাধীন জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ওখানে হাসপাতালগুলো চালু হলে লোকজন বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে পারবে। ঢাকায় আসা লাগবে না। ছয়টি নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে, আরও হবে। সরকারি ওষুধ কারখানার একটা বড় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জমি অধিগ্রহণ চলছে। ৫০ বছরের পুরোনো কারখানা দিয়ে কাজ হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, শেখ রাসেলের নামের সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িত। কাজেই এখানে নিষ্ঠা, একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা যদি আমাদের মৃত্যুর কথা মনে রাখি, আমরা আমাদের কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হবো। আমরা মনে করি আমাদের প্রচেষ্টা আমাদের সেবার মানকে আরও উন্নত করবে৷ যেখানে যে গ্যাপটুকু আছে সেটা পূরণ করার অনুরোধ জানাই। শেখ রাসেল একটা অপ্রকাশিত প্রতিভা ছিল। তার বয়স বাড়বে না আর।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব সভাপতি ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ বেশি সময় নয়, মাত্র ১৩ বছর। এ সময়ে কমিউনিটি মেডিকেল থেকে শুরু করে টারশিয়ারি হাসপাতাল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, শেখ রাসেলের মতো নিষ্পাপ শিশুকেও ঘাতকরা হত্যা করে। সেই শিশু সন্তান শেখ রাসেল আমাদেরই সমবয়সী। তার আচরণ যদি বিশ্লেষণ করেন বুঝবেন সে আমাদের জন্য সম্পদ হতে পারতো।
আজকে যাদের টাকা-পয়সা আছে, তার অল্প কিছু হলেই বিদেশে চলে যান। যারা কথায়-কথায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান, তাদের বোঝান বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. সিরাজুল ইসলাম শিশির বলেন, আমরা প্রফেশনালি চিকিৎসক। আমাদের সার্ভিসের দ্বারা শেখ রাসেলের নাম যেন ছড়িয়ে পড়ে সেরকম সার্ভিস দেবো।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, শেখ রাসেল হাসপাতাল একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। আজকে যে মাল্টিপারপাস ভবন স্থাপিত হলো এখানে ব্যবস্থাপনা যত বেশি স্মার্ট হবে, আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, জাতির জনক সারা বাংলাদেশের মানুষের ঐকান্তিক মঙ্গলের জন্য সারা জীবন কাজ করে গেছেন। তার স্বপ্ন পূরণে কন্যা শেখ হাসিনা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা যখন গ্যাস্ট্রোলজির হাসপাতালের চিকিৎসার প্রস্তাবনা নিয়ে যাই, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে এ হাসপাতাল যেন ব্যাতিক্রম হয় এবং সাধারণ মানুষ সু-চিকিৎসা নিতে পারে। আজকে এ ভবনের উদ্বোধন এ হাসপাতালের জন্য একটা মাইলফলক।
এর আগে মন্ত্রী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলজি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের নির্মিতব্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।