উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’, যদিও এ বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল পূর্বাভাস সংস্থাগুলো। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এটি মূলত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এ গতিপথ ধরে এগোলে এটি ভারতের ভুবনেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার কথা। কিন্তু এটি ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ রূপ নেওয়ার পর কিছুটা এগিয়ে উত্তর-পূর্বে মোড় নিয়েছে।
রোববার থেকেই বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উপকূলীয় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় বইছে দমকা হাওয়া। আবহাওয়া দপ্তর আগেই উপকূলীয় অঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
রোববার সকালে থেকে সারাদিনই ঢাকার আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল, রাত থেকে ঢাকায় হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবারও আকাশ মেঘে ঢেকে রয়েছে, চলছে বৃষ্টি।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সিত্রাং মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। উপকূলীয় ১৯টি জেলাতেই ‘সিত্রাং’ এর তাণ্ডব থাকতে পারে।
সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত মানে হলো- বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার, তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপদজনক সময় এখনো আসেনি।
কতটা শক্তি নিয়ে এটি উপকূলে আঘাত হানবে সেটি এখনই পরিষ্কার নয়। কারণ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উপকূলের কাছে এসে সিত্রাং কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে উপকূল অতিক্রমের সময় এর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
অমাবশ্যা থাকায় উপকূলের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উপকূলের নিম্নাঞ্চল ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ‘সিত্রাং’ ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশের উপকূলেরে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সোমবারের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। ‘সিত্রাং’ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল নাগাদ বাংলাদেশের তিনকোণা দ্বীপ (খুলনা) ও সন্দ্বীপের (চট্টগ্রাম) মধ্য দিয়ে স্থলভাগে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৭) জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং' উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেইসঙ্গে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।