ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

নারী অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২২

নারী অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ
নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও সহায়তায় প্রয়োজনে আলাদা প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিল্ড্রেন স্টাডিজ (সিডব্লিউপিস)। একই সঙ্গে নারী অভিবাসন নিয়ে গণমাধ্যমে আরও ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশেরও আহ্বান জানিয়েছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন। ইতিবাচক শব্দচয়ন, ঘৃণা এবং অপমান জনক শব্দ এড়িয়ে চলা, ইতিবাচক ও নেতিবাচক সংবাদ প্রচারে ভারসাম্য বজায় রাখারও আহ্বান জানানো হয়।

রোববার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সিডব্লিউপিএস এর আয়োজনে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংস্থার নির্বাহী সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, আমরা যা তথ্য পাচ্ছি সে অনুযায়ী সৌদি আরবে আমাদের নারীরা সবেচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
বিষয়টা তদারকি করার জন্য মিডিয়ার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে।

একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার। তাহলে সরকারি উদ্যোগগুলো চমৎকারভাবে কাজ করবে। প্রোটেকশন, প্রিভেনশন, প্রভিশন এ তিনটি ‘পি’ সরকার পালন করছে কি না সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, অনেক নারী বিদেশ থেকে গর্ভবতী হয়ে আসার খবরও আমরা পাই। পরে তারা সামাজিকভাবে দুঃসহ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান। নারী অভিবাসীদের জন্য প্রয়োজনে আলাদা প্রজেক্ট নেওয়ারে দাবি জানাই। কল্যাণ বোর্ডের ৯ ধারা অনুযায়ী নারীদের জন্য একটি প্রজেক্ট নেওয়ার নির্দেশনা আছে, এবং সন্তানের দায়িত্বও প্রয়োজনে ওই প্রকল্পের মধ্যে নেওয়া দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে নারী অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক নিবন্ধ যৌথভাবে প্রস্তুত করেন সিডব্লিউসিএস ও অভিবাসী কর্মী কল্যাণ ফাউন্ডেশন (ওকাফ) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব এলাহি।

নারী অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেন অভিবাসী কর্মী কল্যাণ ফাউন্ডেশন (ওকাফ)-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব এলাহি। তিনি বলেন, বিএমইটি স্ট্যাস্টিটিক ডাটা অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে ২০২২ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৮৬ হাজার ২৫০ জন নারী অভিবাসন করেছেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৭৯৪ জন নারী অভিবাসন করেছেন। করোনাকালে প্রায় ৫০ হাজার অভিবাসী দেশে ফিরেছে।

তিনি বলেন, বিদেশ ফেরত নারী অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি উদ্যোগ, নারী অভিবাসন বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রচার, নারী অভিবাসী সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, বিদেশ ফেরত নারী অভিবাসীর অবস্থা, কোভিড-১৯ এর প্রভাব, কোভিড-১৯ এর প্রভাব ফলে নেওয়া উদ্যোগ, নারী অভিবাসীর জন্য ন্যায় বিচারের আহ্বান, গন্তব্য দেশে নারী অভিবাসীদের হয়রানি ও নির্যাতন, ইতিবাচক মিডিয়া রিপোর্টিং ইত্যাদি নানা বিষয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসনের জন্য সংবাদ মাধ্যমকে নারী শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও অবদান তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসনে সরকারের সব সংস্থা, আইএনজিও, এনজিও ও সিবিওদের কার্যক্রম ও সেবা-পরিষেবা তুলে ধরার মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন সহজ ও সমর্থক করবে। সর্বোপরি একজন নারী শ্রমিকের অভিবাসনকে করে তুলবে সার্থক ও সফল।

সিডব্লিউসিএসের সভাপতি প্রফেসর ইশরাত শামীম বলেন, নির্যাতনের শিকার অভিবাসী নারীদের পাশাপাশি সফল নারীদের গল্পও তুলে ধরবে৷ এর মাধ্যমে অন্য নারীরাও বুঝতে পারবে আসলে যাওয়ার পথটা কী হবে। যদি আপনারা দালালদের ওপর নির্ভর হয়ে যান, তাহলে বিপদ হবে। দালালরা কখনো এ কথা বলবেন না। তারা বলে আপা, সঠিক ইনফরমেশন আমরা জানি না। কাজেই এ ব্যাপারে সঠিক পথ আপনার তুলে ধরবেন এ প্রত্যাশা।

সাইয়েদ মাহবুব এলাহী বলেন, আমাদের নারী শ্রমিকরা যদি দক্ষ হয়ে যায়, তাহলে আরও বেশি উপার্জন করতে পারে। শুধু যাওয়া নয়, পাশাপাশি তাদের ফিরে আসার পথটাও ঠিক হওয়া দরকার।

বাংলাদেশি অভিবাসী নারী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ রুমানা বলেন, নারীদেরকে দক্ষ করে পাঠাতে হবে। তারা অনেক টাকা দিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়েও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সেখান থেকে যখন দেশে চলে আসছেন, দেশে এসেও কিছু করতে পারছেন না। তাদের সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত। আমরা দেখেছি করোনাকালে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী দেশে ফিরে এসেছেন।

হ্যালভেটাস বাংলাদেশের ফরহাদ আল করিম বলেন, দেশে কুমিল্লা থেকে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যান। অথচ সেখানে অভিবাসন অফিস নেই। পুরুষ অভিবাসনের চেয়ে নারী অভিবাসন অনেকটাই কঠিন।

সৌদি আরব থেকে আসা অভিবাসী তুলি বলেন, আমি চার বছর সেখানে থেকেছি। কেবল সাত হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতাম। সেখান থেকে এসে এনজিওর সহায়তায় এখন মাস্ক তৈরির কাজ করি।

সংবাদ সম্মেলনে সিডব্লিউসিএসের সুবিধাভোগীরা তাদের নিজের অবস্থান ও সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রমের গল্প তুলে ধরেন।