দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ছে, কমছে তার থেকে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। এতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা পুঁজি ধারাবাহিকভাবে কমে চলেছে। দাম কমতে কমতে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) চলে এসেছে। এতে অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করলেও ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে একদিকে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে হতাশা।
আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। ফলে টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতন হলো।
শেয়ারবাজারের এই দরপতনের পেছনের কারণ হিসেবে আসন্ন বিশ্বমন্দার আভাস এবং চলমান লোডশেডিংকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে ‘বিনিয়োগকারীদের জমা করা চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না’- নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে দেওয়া এ সংক্রান্ত নির্দেশনাকেও দরপতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন তারা।
অবশ্য বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। তাই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বেশি দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। সে কারণে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রির চাপ না বাড়িয়ে শেয়ার ধরে রাখতে হবে। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ কমলে দরপতনও কমে আসবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বুধবার (১৯ অক্টোবর) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়। ফলে এদিন লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের ৯ মিনিটের মাথায় সূচকটি ৬২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে এমন বড় উত্থান প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত সূচকের পতন দিয়ে দিনের লেননেদ শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির। আর ২২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচক কমলেও বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৭২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
পতনের বাজারে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৬৭ কোটি ৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়। ৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেএমআই সিরিঞ্জ, এডিএন টেলিকম, পেপার প্রসেসিং, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বাংলাদেশ ল্যাম্প এবং আনোয়ার গ্যালভানাইজিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৭টির এবং ৯৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।