রুশ আক্রমণে ইউক্রেনের টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেটসহ বেশিরভাগ যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশটিকে কয়েক মাস ধরে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছিল ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। তবে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ইউক্রেনকে আর এই ব্যয়বহুল সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষধনী। খবর বিবিসির।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কিয়েভ প্রশাসনের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সংযোগবিচ্ছিন্ন করা। এ উদ্দেশ্যে টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এর কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ও জনগণের যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আটকাতে ইউক্রেনে স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্টারলিংক সক্রিয় করেন ইলন মাস্ক।
কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত মাসে টেসলা সিইও তার পরিবর্তে পেন্টাগনকে স্টারলিংকের খরচ বহন করতে বলেছেন। ইউক্রেনীয় প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কে সাম্প্রতিক তিক্ততার কারণেই ইলন মাস্ক এসব কথা বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে রুশ বাহিনীর অধিকৃত ভূখণ্ডের দাবি ছেড়ে দিতে ইউক্রেনকে পরামর্শ দিয়ে কিয়েভের বিরাগভাজন হয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ইলন মাস্ক এক টুইটে বলেছেন, স্পেসএক্স অতীতের খরচ দিতে বলছে না। তবে বিদ্যমান ব্যবস্থাটিতে (স্টারলিংক) অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থায়ন করতে পারবে না।
স্টারলিংক মূলত স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহকারী একটি ব্যবস্থা। যুদ্ধের মধ্যে এটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। ইউক্রেন এই সপ্তাহে রাশিয়ার শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরেও বিভিন্ন অবকাঠামো ফের চালু করতে সহায়তা করার জন্য স্টারলিংককে কৃতিত্ব দিয়েছে।
কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু রাখা খুবই ব্যয়বহুল। মাস্কের তথ্যমতে, ইউক্রেনে স্টারলিংক সেবা চালু রাখতে প্রতি মাসে দুই কোটি মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনকে অনলাইনে রাখার জন্য এ পর্যন্ত আট কোটি ডলার খরচ হয়েছে তার।
মাস্ক বলেছেন, টার্মিনাল ছাড়াও স্যাটেলাইট ও গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি, উৎক্ষেপণ, রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতির প্রয়োজন হয়। তাদের সাইবার আক্রমণ এবং জ্যামিংয়ের বিরুদ্ধেও কাজ করতে হচ্ছে, যা ক্রমেই আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
অবশ্য মাস্কের সঙ্গে কিয়েভ প্রশাসনের উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেছেন ইউক্রেনীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী মিখাইলো ফেদোরভ। তিনি টুইটারে বলেছেন, অবশ্যই ইউক্রেনকে সহায়তাকারী বিশ্বের শীর্ষ বেসরকারি দাতাদের মধ্যে একজন ইলন মাস্ক। স্টারলিংক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর একটি অপরিহার্য উপাদান।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইউক্রেনে স্টারলিংক সক্রিয় রাখতে একটি সমাধান খুঁজে বের করা হবে।
বিরোধের শুরু
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইলন মাস্ক টুইটারে প্রস্তাব করেছিলেন, ইউক্রেন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি এবং অধিকৃত এলাকাগুলোতে গণভোট মেনে নিক। ক্রেমলিন মাস্কের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় কিয়েভ।
জার্মানিতে ইউক্রেনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আন্দ্রিজ মেলনিক একটি গালিযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে মাস্ককে দূর হয়ে যেতে বলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিনামূল্যে স্টারলিংক সেবা বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়ে শুক্রবার এক টুইটে মাস্ক বলেছেন, আমরা কেবল তার সুপারিশ মেনে চলছি।
সম্প্রতি ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চল- লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করেছিল রাশিয়া। এতে প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে দাবি করেছে মস্কো। তবে এই নির্বাচনকে বেআইনি ও প্রহসন উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা।
ইলন মাস্ক প্রস্তাব দিয়েছেন, অতীতে ক্রিমিয়া যেমন রাশিয়ার অংশ ছিল, তেমনই থাক। আর নতুন অধিকৃত চার অঞ্চলে জাতিসংঘের তদারকিতে নতুন করে গণভোট হোক। সেখানকার বাসিন্দারা রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে মত দিলে সেটাই হবে।
এসব প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে একটি পোল চালু করেন তিনি। এতে ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী হ্যাঁ এবং ৬০ শতাংশ না ভোট দিয়েছেন।
এর মধ্যেই গুঞ্জন ছড়ায়, এই পোল চালু করার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইলন মাস্ক। তবে এই দাবি অস্বীকার করে মার্কিন ধনকুবের বলেছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ঠিকই, তবে তা ১৮ মাস আগে এবং আলোচনা হয়েছিল কেবল মহাকাশ নিয়ে।