Can't found in the image content. ই-স্কুটার ব্যবহারে দারুণ সাড়া মিলছে ব্রিটেনে | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

ই-স্কুটার ব্যবহারে দারুণ সাড়া মিলছে ব্রিটেনে

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২২

ই-স্কুটার ব্যবহারে দারুণ সাড়া মিলছে ব্রিটেনে
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে, মাইকেল ডিউই একটি প্রবাল রঙের ই-স্কুটারে এক পায়ে চড়ে চলছেন। ডিউই সাধারণত পোর্টসমাউথ হারবারে নিজে গাড়ি চালিয়ে যান এবং তার কাজ করেন। কিন্তু আজ তিনি তার গাড়িটি গ্যারেজে রেখে গেছেন। তার বাড়ি থেকে চার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়ার জন্য তার স্কুটার ভাড়া পড়বে ১ দশমিক ৯০ ইউরো বা ২ দশমিক ১০ ডলার। তিনি মনে করেন একটি ট্যাক্সি ভাড়া তার চেয়ে চার গুণ বেশি হবে।

ই-এর অর্থ হচ্ছে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক। ব্রিটেনে এটি ‘পরীক্ষামূলক’ও বলা চলে। ২০২০ সাল থেকে পরিবহন বিভাগ ৩১টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ই-স্কুটার ভাড়া দেওয়ার পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়। করোনা মহামারির কারণে স্কিমটি দ্রুত শুরু হয়েছিল, কারণ তখন লকডাউন থাকার কারণে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কমিয়ে দেওয়া হয়। এটির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো সরকারকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপায় হিসেবে ই-স্কুটারকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা। পোর্টসমাউথ কাউন্সিলের সদস্য লিন স্ট্যাগ, যিনি একটি ট্রায়াল চালাচ্ছেন, বলেন শহরের একটি প্রধান সমস্যা যানজট এবং বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব তাদের গাড়ি থেকে বের করতে চেয়েছিলাম’।

যদিও সবাই আগ্রহী নয়। জরিপে দেখা গেছে, পোর্টসমাউথের দুই-তৃতীয়াংশ অ-ব্যবহারকারী বলেছেন যে তারা নিষিদ্ধ করতে চান। একটি উদ্বেগ হচ্ছে নিরাপত্তা। সারাদেশে মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশকে এড়াতে এবং বধির, অন্ধ ও বৃদ্ধরা এই নীরব যন্ত্রের হয়রানির শিকার হতে পারে। ২০২১ সালের প্রতিবেদন বলছে, ই-স্কুটার দুর্ঘটনার সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩শ ৫২। কোনো পথচারী নিহত হননি, মারা গেছে ১০ জন আরোহী।

কতটা ব্যক্তিগত ও ভাড়া করা স্কুটার চলে তার ঠাহর করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একটি দাতব্য সংস্থা জানায়, দুর্ঘটনা থেকে যে ডেটা পাওয়া যায়, তাতে ৮২ শতাংশ অবৈধ।
সরকার এখনও ট্রায়ালের জন্য নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। তবে অন্যান্য পরিসংখ্যান ই-স্কুটার, বিকল্পের চেয়ে নিরাপদ বলে মনে করে। রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্যা প্রিভেনশন অব অ্যাক্সিডেন্টস, আরেকটি দাতব্য সংস্থার মতে, ই-স্কুটার প্রতি ১ মাইলে শূন্য দশমিক ৭টি সংঘর্ষে পড়ার প্রবণতা আছে, যেখানে সাইকেলের জন্য ৩ দশমিক ৩ এবং মোটরবাইকের জন্য ৫ দশমিক ৯ শতাংশ সংঘর্ষ হয়।

পরিবহন পরিকাঠামো নিরাপত্তার জন্য একটি পার্থক্য করা জরুরি। অনেক গাড়িচালকের ক্ষোভের কারণে, ভাড়া করা ই-স্কুটারগুলো রাস্তায় (কিন্তু মোটরওয়েতে নয়) এবং বিশেষ সাইকেল লেনগুলোতে চলতে পারে। ছয়টি ইউরোপীয় দেশের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভাড়া করা ই-স্কুটার চালু হওয়ার পরে ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা গড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু যেসব শহরে ভালো সাইকেল আছে সেখানে বাড়েনি।

ই-স্কুটারের বিরোধিতা করার আরেকটি কারণ হলো যে তারা ততটা পরিবেশবান্ধব নাও হতে পারে যতটা মানুষ ভাবে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্রিশ্চিয়ান ব্র্যান্ড বলেছেন, ই-স্কুটারগুলো সাধারণত গাড়ির পরিবর্তে পায়ে বা সাইকেলে করে ছোট যাত্রার প্রতিস্থাপন করে। একটি ফরাসি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এটির স্বল্প আয়ুষ্কালের কারণে, একটি ই-স্কুটার চালানো মেট্রোতে যাওয়ার চেয়ে ছয়গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণ করতে পারে। পোর্টসমাউথে তবে, কাউন্সিল বলছে যে ৩৪ শতাংশ ব্যবহারকারী সমীক্ষায় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন যে তারা অন্যথায় তাদের শেষ ই-স্কুটার যাত্রার জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। আগের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ কম হাঁটেন বা সাইকেল চালান।

এই স্কিম সম্পর্কে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো এটি স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুমতি দেয়, বলছিলেন ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের লরনা স্টিভেনসন। যিনি ট্রায়ালগুলোর জন্য পিএইচডি সম্পন্ন করছেন। কাউন্সিলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে, ই-স্কুটার কোম্পানিগুলো ক্রমাগত তাদের ‘জিওফেনসিং’ পরিমার্জন করে, যা ‘নো-গো’ অঞ্চলগুলোকে ধরতে পারে, যেখানে স্কুটার বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি বিধিনিষেধ প্রয়োগ করতে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে।

পাবলিক ফিডব্যাকও স্কিমগুলো সম্পর্কে অবহিত করে। সমীক্ষাগুলো ধারাবাহিকভাবে আরও পার্কিং বের চাহিদা তৈরি করে। সেইসাথে নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগও দেখায়। পোর্টসমাউথ ও অক্সফোর্ডের পরিচালনাকারী সুইডিশ ফার্ম ভিওই-এর জিম হাবার্ড বলেন, ব্রিটেনে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় আরও বাধ্যতামূলক পার্কিং বে রয়েছে।

যদি আগ্রহ সাফল্যের একটি পরিমাপ হয়, তাহলে পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে চলছে। ৩১টির মধ্যে ২৯টি কাউন্সিল এটি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইচ্ছা পোষণ করছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ট্রায়ালের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বাস্তব ফলাফল শিগগির আসতে পারে, যদি প্রাইভেট ই-স্কুটারগুলোকে বৈধ করা হয়। সম্ভবত পরের বছর প্রত্যাশিত একটি পরিবহন বিল উত্থাপিত হবে। তখন ই-স্কুটার সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে।

সূত্র: দ্যা ইকোনমিস্ট