ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হতে পারে এমন গুজবে ট্রেজারি বা সরকারি বন্ড চালুর দিনে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ১১৯ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ২৮২ পয়েন্ট।
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রোববার লেনদেন বন্ধ ছিল। ফলে সোমবার (১০অক্টোবর) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতই শুরু হয় সূচকের ওঠানামা, যা অব্যাহত ছিল বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এরপর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হচ্ছে। শুরু হয় শেয়ার বিক্রির চাপ, শুরু হয় বাজারে ক্রেতা সংকট। এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে ২ শতাধিক কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্রেতাই ছিল না। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দিনের শেষ দুই ঘণ্টায় লেনদেন হয় সূচক পতনের ধারায়। এই দুই ঘণ্টায় বড় দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের শেষ দিকে একজন অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক গণমাধ্যমকে বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণ ফোনের মতো ভালো ভালো কোম্পানি শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) উচিত ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া, বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বাজারে গুজব ছড়ানো হয়েছে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ডিএসই ও সিএসইতে ২৫০টি সরকারি বন্ড অর্থাৎ ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৩ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু কোনো ক্রেতা না থাকায় দিনভর ২৫০টি বন্ডের কোনো লেনদেন হয়নি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আজ দিনভর ডিএসইতে ৩৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে মোট ২০ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯১টি শেয়ার ও ইউনিটের কেনাবেচা হয়েছে। যার মূল্য ১ হাজার ৪১৭ কোটি ৫২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
বাজারে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ১৬৭টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর।
পুঁজিবাজারে রাজা ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইস্টার্ন হাউজিং, জেএমআই হসপিটালসহ ১৭৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ২৭ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ৪৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে ছিল ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। তৃতীয় স্থানে ছিল সোনালী পেপারের শেয়ার। এরপর যথাক্রমে লেনদেনের শীর্ষে ছিল, আইপিডিসি, ইস্টার্ন হাউজিং, জেএমআই হসপিটাল, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, শাইনপুকুর সিরামিক,ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডে এবং ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেডের শেয়ার।
দেশের অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৮২ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১১৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৪ টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৮ কোটি ৯১ লাখ ৯১ হাজার ৩২৩ টাকার শেয়ার।