পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার কখনো কোনো লোককে বিনা বিচারে হত্যা করে না। কোনো লোক গুম হোক সরকার চায় না। দুর্ঘটনা ঘটে সব দেশেই ঘটে।সেজন্য সরকার দায়ী নয়।তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া আছে। যারা এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায় তাদের শাস্তির জন্য খুবই কঠোর শেখ হাসিনার সরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দেখে পশ্চিমাদের মাতবরি খুব বেড়েছে। বাঙালি জাতি রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে জানে। তাই কারো পরামর্শ এই জাতির প্রয়োজন নেই।
শনিবার সিলেট সদর উপজেলার সাহেবেরবাজার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে মন্ত্রী বেলা ১১টার দিকে সাহেবেরবাজার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাহেবেরবাজার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন খান, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন।
আলোচনা সভা শেষে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ায় এই ইস্যুতে সরকার পশ্চিমাদের কোনো চাপ অনুভব করছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন, আমি বিদেশে অনেকদিন রাষ্ট্রদূত ছিলাম। এর আগে শিক্ষক ছিলাম।যখন শিক্ষক ছিলাম তখন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম নানা ইস্যুতে আমার ইন্টারভিউ নিত। আর যখন রাষ্ট্রদূত হলাম সেন্ডি নামে একটি ঘূর্ণিঝড় হলো যদিও এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ভালো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো গণমাধ্যম কিন্তু আমার কোনো সাক্ষাৎকার নেয়নি।আর দুঃখের বিষয় কোনো কথা নাই বার্তা নাই, বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের কাছে স্বদেশি ইস্যুগুলো সম্পর্কে জানতে চান।যারা আমাদের সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখে না। আমি বলব, তারা আগে নিজের চেহারা আয়নায় দেখুক তারপর অন্য কথা বলুক। আমরা এত পরামর্শ চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের হৃদয় স্বচ্ছ, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সব সময় স্বচ্ছ রাজনীতি করেছে এবং যতগুলো নির্বাচন করেছে সবগুলো স্বচ্ছ।১৯৭০ সালের নির্বাচন কিংবা ২০০৮ সালের নির্বাচন সবগুলোই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।’
মোমেন বলেন, ‘পৃথিবীতে বাঙালি জাতিই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছে তাও প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।সুতরাং গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকারের জন্য রক্ত দেওয়ার জাতি বাঙালি। গণতন্ত্র মানবাধিকার কিংবা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জাতি বাঙালি। এখন যারা মাতবরি করছেন ১৯৭১ সালে তারা আমাদের কাছে ছিলেন না, তাদের মানবিকতাও ছিল না ন্যায়-অন্যায়ের চিন্তাবোধও ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ভালো- তখন পশ্চিমাদের মাতবরি খুব বেড়েছে। এর জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেকটা দায়ী।’
বিরোধী দল বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার কারণে এমন হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো সমস্যা না, সমস্যা হলো গণমাধ্যমের। সব ইস্যুতেই তাদের কাছে যেতে হবে কেন?তাদের কাছে কিছু জানতে চাইলে, তাদের দেশে স্কুলে গুলি হয়, শপিংমলে গুলি করে মানুষ মারে, ওইসব দেশে হাজারের ওপর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়- সেসব বিষয় নিয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত, এটা তাদের সমস্যা।’
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে তো এমন হয় না।কালে-ভদ্রে একটা হলে আপনারা এটা নিয়ে অনেক বলেন।’