দেশে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুলের ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন এবং কলেজপড়ুয়া ৮৪ জন। আত্মহননকারীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।
বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের “মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা” শীর্ষক এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. এ ওহাব।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর একাডেমিক চাপ তাদের আত্মহত্যার পেছনে কতটুকু দায়ী এবং অন্যান্য কী কী কারণ জড়িত; তা জানার লক্ষ্যেই এই গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়।
তিনি আরও জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় জরিপে মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৭.৬৮% শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২৩.৪১% বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২.২৬% মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং বাকিরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি এবং মাদ্রাসার।
জরিপে অংশ নেয় ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
মোট অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭.৯৯% জানিয়েছেন তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ জীবনকে প্রভাবিত করেছে। ৮০.৭৯% শিক্ষার্থীর মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তি আসা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলেছে।
করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ জন বা ২.৪৪% শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আত্মহত্যার উপকরণ জোগাড় করেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছেন ৪.৭৬% শিক্ষার্থী। মহামারি পরবর্তী আত্মহত্যার করার কথা মাথায় এসেছে ৩৪.১৫% শিক্ষার্থীর।
সমাধানের পথ
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য দায়ী যে সমস্যাগুলো জরিপে উঠে এসেছে, তা মোটামুটি চার ধরনের। সেগুলো হলো- একাডেমিক চাপ, আর্থিক সংকট ও চাকরিগত দুশ্চিন্তা এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ।
আঁচল ফাউন্ডেশন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা সমাধানে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো হলো- শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাভাবিক ও ইনফরমাল সম্পর্ক তৈরি করা, অতিরিক্ত সিলেবাস কমিয়ে যথাসময়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করে সেশনজট মুক্ত করা, পড়ালেখাকে আনন্দময় ও বাস্তবমুখী করা, প্রথাগত সিলেবাসের পরিবর্তে চাকরি বাজারের উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষাঋণ চালু করা, খণ্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করা, ক্যারিয়ার গঠনে পরামর্শ ও সহায়তা পেতে বিভাগের উদ্যোগে অ্যালামনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করা, জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার আয়োজন করা।