ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

বিদেশে পাঠানোর নামে ৩ কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ৮, ২০২২

বিদেশে পাঠানোর নামে ৩ কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা
বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া দুই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার প্রধান সহযোগী মাহমুদ করিম (৩৬)। 

রাজধানীর শান্তিনগর থেকে র‌্যাব-৩ এর একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে চক্রের এই দুইজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে জব্ধ করা হয় বিপুল সংখ্যক পাসপোর্ট, ভুয়া ভিসা ও জাল কাগজপত্র। তারা বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

র‌্যাব বলছে, এই চক্রটি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ ও বেকার যুবকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভিকটিমদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানকালে মাহবুব ও মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি করা ভুয়া কোর্সের ৬৫টি সনদ, মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টিসহ অন্যান্য উপকরণ জব্দ করা হয়। 

গ্রেফতাররা বিভিন্ন অসহায় দরিদ্র লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জানিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা করে জমা নেয়।

তিনি আরও বলেন, মাহবুব ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠায়। বিদেশে পৌঁছার পর বিদেশে অবস্থানরত এজেন্ট দিয়ে পুনরায় প্রতারণা করা হয়। তাদের কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। সেখানে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। 

একটা সময়ে ভিকটিমদের কোনো খাবার দেওয়া হয় না। এ সময়ে মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ভিকটিমদের অপেক্ষা করতে বলে। সে জানায় কিছুদিন পরে কোম্পানি চালু হবে। তখন তারা বেতন ও কাজের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে বিদেশে অবস্থানরতরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে নিজেদের চেষ্টায় টিকিট জোগাড় করে দেশে আশার চেষ্টা করেন। এরপর ভিকটিম দেশে ফিরে এলে মাহবুব অভিভাবক এবং ভিকটিমদের উল্টো দোষারোপ করে। সে দাবি করে ভিকটিম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে কাজের সুযোগ পেতো। এভাবে করোনা মহামারির পূর্ব পর্যন্তু মালয়েশিয়া, দুবাই এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ভিকটিমদের পাঠিয়ে প্রতারিত করে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামিদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোনো লাইসেন্স নেই। স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

ব্রিফিংয়ের সময় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আসেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এক ভুক্তভোগী যুগান্তরকে বলেন, যারা তাদের কাছে রোমানিয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছে তাদের কারও ভিসাই ঠিক নেই। সবাই প্রতারিত হয়েছে। 

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, পাসপোর্টের সঙ্গে সব টাকা দেওয়ার দেড় মাস পর মাহবুব তাকে একটা পারমিটের কাগজ দেয়। পারমিটটাও ছিল ভুয়া। 

আরেকজন জানান, তিনি তার বিয়াইকে রোমানিয়া পাঠানোর জন্য টাকা দিয়েছিলেন। তাকে একটি ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট দেয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদেরকে ভিজিট ভিসায় দুবাই পাঠিয়ে দেওয়া হতো।