বিলুপ্ত হোমিনিনের জিন ও মানব বিবর্তনের যুগান্তকরী এক গবেষণার জন্য চলতি বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ জিনতাত্ত্বিক বিজ্ঞানী সোয়ান্তে প্যাবো। সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেছে।
নোবেল কমিটির সেক্রেটারি থমাস পার্লম্যান বলেন, ‘বিলুপ্ত হোমিনিনদের জিনোম এবং মানবজাতির বিবর্তন সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য সোয়ান্তে প্যাবোকে ২০২২ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞান অথবা শরীরতত্ত্বের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।’
সুইডিশ এই জিনতাত্ত্বিক তার গবেষণার মাধ্যমে মানবজাতির বিবর্তন নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এক অসাধ্য সাধন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গবেষণার মধ্যে ছিল বর্তমান সময়ের মানুষের বিলুপ্ত বংশধর নিয়ান্ডারথালের জিনোম সিকোয়েন্স করা। করোনাভাইরাস মহামারিতে নিয়ান্ডারথাল গোত্রের সদস্যরা সংক্রমণের উচ্চ-ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে ২০২০ সালে এক গবেষণায় জানিয়েছিলেন প্যাবো।
এর আগে, তিনি অজানা হোমিন ডেনিসোভারের ব্যাপারেও চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার করেছিলেন। প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের পর এই বিলুপ্ত হোমিন কীভাবে হোমো সেপিয়েন্সের মাঝে জিন স্থানান্তর করেছে প্যাবো তার গবেষণায় সেটি দেখেছেন।
বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে জিনের এই প্রাচীন প্রবাহের শরীরবৃত্তের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। যার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটিকে প্রভাবিত করে জিনের প্রাচীন প্রবাহ।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে নাম ঘোষণার আগে টেলিফোনে প্রথমে প্যাবোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার তথ্য জানান নোবেল কমিটির সেক্রেটারি থমাস পার্লম্যান। টেলিফোনে প্যাবোর প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে থমাস বলেন, ‘তিনি (প্যাবো) অভিভূত হয়েছেন। তিনি বাকরুদ্ধ। অত্যন্ত খুশি।’
‘তিনি জানতে চেয়েছিলেন, পুরস্কার জয়ের এই তথ্য অন্য কাউকে বলতে পারবেন কিনা এবং এমনকি তার স্ত্রীকে জানাতে পারবেন কিনা। আমি বলেছি, ঠিক আছে। জানাতে পারবেন। তিনি এই পুরস্কার পেয়ে অবিশ্বাস্য রকমের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।’
সুইডিশ জৈব রসায়নবিদ সুনে বার্গস্ট্রোমের ছেলে সোয়ান্তে প্যাবো। ১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সুইডেনের আপসালা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছেন।
বরাবরের মতো এবারও নোবেল পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন এই বিজয়ী। এর আগে, গত বছর তাপমাত্রা এবং স্পর্শের জন্য রিসেপ্টর আবিষ্কারের গবেষণায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী আর্ডেম পাতাপুতিয়ান ও মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস।
সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে এবারের নোবেল পুরস্কার মৌসুমের সূচনা হয়েছে। এরপরই মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞান, বুধবার রসায়ন এবং বৃহস্পতিবার সাহিত্যের নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার আগামী শুক্রবার (৭ অক্টোবর) এবং ১০ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে এবারের নোবেল পুরস্কারের পর্দা নামবে।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ছোট আকারের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির বাইরে অন্য কোনও অতিথি উপস্থিত ছিলেন না।
এ বছর নোবেল ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের বিজয়ীদের সঙ্গে গত দুই বছরের বিজয়ীদেরও আগামী ডিসেম্বরে স্টকহোমের নোবেল সপ্তাহে আমন্ত্রণ জানাবে। সেখানেই নোবেল পুরস্কারের মূল্য ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনারের (প্রায় ৯ লাখ ডলার) পাশাপাশি বিজয়ীদের হাতে ১০ ডিসেম্বর একটি সনদ ও স্বর্ণপদক তুলে দেওয়া হবে।
উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি উইল করে যান— প্রতি বছর ৫টি বিষয়ে যারা বিশেষ আবদান রাখবেন; তাদের যেন এই অর্থ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আর অর্থনীতির পুরস্কার মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে প্রবর্তন করেছে ব্যাংক অব সুইডেন। ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পুরস্কার চালু করে। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। চলতি বছরে সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষ হবে আগামী ১০ অক্টোবর।