সড়কে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি এক শতাংশ জায়গা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে মাত্র ২ দশমিক ২০ জন। অপরদিকে একটি বাস ২ শতাংশ জায়গা নিয়ে যাত্রী বহন করে ৪৪ দশমিক ২০ জন। অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে অধিক জায়গা দখল করে কম সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করে। এতে সৃষ্টি হয় বাড়তি যানজট।
রাজধানীতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও প্রায় ৯০ শতাংশ যাতায়াত সংঘটিত হয় গণপরিবহনে। বাকি ১০ শতাংশ যাতায়াত করেন ব্যক্তিগত গাড়িতে।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২২ পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক র্যালি শেষে বক্তারা এসব কথা জানান। ‘জ্বালানি ব্যবহার ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করি, ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত রাখি’ শীর্ষক র্যালিটি ধানমন্ডি ২৭ এর মোড় থেকে শুরু হয়ে আবাহনী খেলার মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
সম্মিলিতভাবে এটির আয়োজন করে রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ছায়াতল বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশ, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ।
দূষণ, যানজট, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহন ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়ার ওপর জোর দেন বক্তারা। পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
র্যালিতে অংশ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন। এসময় তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৭৬ শতাংশ ট্রিপ দুই কিলোমিটারের মধ্যে সংঘটিত হয়। হেঁটে যাতায়াতের আনন্দদায়ক ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে অনেকেই হাঁটতে উৎসাহিত হবেন। দৈনন্দিন কাজে অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।
তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ, যানজট, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে শহরে হাঁটার পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। দেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সংকট আরও বাড়বে। নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন সম্ভব।
র্যালিতে বক্তারা বলেন, নগরবিদ ইয়ান জ্যাকবস তার ‘দি ডেথ অ্যান্ড লাইফ অব গ্রেট আমেরিকান সিটিস’ বইতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন। পরে ১৯৬২ সাল থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সত্তরের দশকের জ্বালানি সংকটের সময় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ব্যাপকতা লাভ করে। বর্তমানে পৃথিবীর ৪০০০ এর অধিক শহরে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়।
বক্তারা আরও বলেন, ২০০৬ সাল থেকে ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০১৬ সাল থেকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
২০১৬ থেকে দিবসটি পালিত হলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা এবং কিছু সড়কে সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করে পথচারী চলাচল ও সামাজিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।