গত ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেল প্রাসাদে ৯৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের সাগরে ভাসছে গোটা ব্রিটেন। ঘোষণা করা হয়েছে দশদিনের রাষ্ট্রীয় শোক। এরই মধ্যে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের তারিখ রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে দেয়া এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে রানির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর)। সেদিন ব্রিটেনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলা শুরু করে। এর পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রাশিয়ার মিত্রদেশ বেলারুশ। ইউক্রেনের ওপর নির্বিচারে হামলার দায়ে এই দুটি দেশকে রানির শেষকৃত্যে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাজ্য।
এছাড়া রানির শেষকৃত্যে আমন্ত্রণ পায়নি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, নির্বিচারে হত্যা এবং তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে মিয়ানমার। এসব কারণে রাশিয়া, বেলারুশ বা মিয়ানমারের কোনো প্রতিনিধি রানির শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশের বেশিরভাগ রাষ্ট্রপ্রধানই রানির শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন। লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে প্রায় ৫শ বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এডিনবরা বিমানবন্দর থেকে রয়াল এয়ার ফোর্সের বিমানে রানির কফিন এসে পৌঁছাবে লন্ডনে এবং বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সেটি নিয়ে যাওয়া হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার আগে ৪ দিন তার মরদেহ সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাখা হবে, যাতে দেশটির সাধারণ মানুষ রানিকে তাদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারে।
রানির শেষকৃত্যে যারা যোগ দেবেন, তাদের জন্য বিশেষ নির্দেশাবলি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে কোনো ব্যক্তিগত বিমান অবতরণের অনুমতি পাবে না। ওই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হলে অতিথিদের বাণিজ্যিক ফ্লাইট ব্যবহার করতে হবে। তবে লন্ডনের অন্যান্য বিমানবন্দরে নামলে ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহারের অনুমতি পাবেন তারা।
এছাড়া বিমান থেকে নামার পর তাদের বাস ব্যবহার করে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তবে অতিথিদের বাসে যাওয়ার জন্য থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
অন্য একটি নির্দেশনায় স্থান স্বল্পতার জন্য অতিথির সংখ্যা সীমিত রাখারও নির্দেশনাও দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলে সীমিত জায়গার কারণে প্রধান অতিথির পরিবারের অন্য কোনো সদস্য, কর্মী বা অনুসারী প্রবেশ করতে পারবেন না।
করোনার বিধিনিষেধ পরেও রানির শেষকৃত্যে দেশি-বিদেশি প্রায় ২ হাজার অতিথির যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তার মরদেহ দেখতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে পুরো লন্ডন শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। পুরো শহরে পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।