ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪ |

EN

বিশ্ববাজারে কমে অর্ধেকে নামলেও দেশীয় বাজারে স্থির রয়েছে পাম অয়েলের দাম

অর্থ ও বানিজ্য ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২

বিশ্ববাজারে কমে অর্ধেকে নামলেও দেশীয় বাজারে স্থির রয়েছে পাম অয়েলের দাম

ফাইল ছবি

বিশ্ববাজারে রেকর্ড পরিমাণ কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে পাম অয়েলের দাম। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল উৎপাদানকারী দেশ মালয়েশিয়াতে বর্তমানে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬৯০ রিঙ্গিতে। যা মে মাসে বুকিং হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ রিঙ্গিতে। সেই হিসেবে, গত তিন মাসে অর্ধেকে নেমে এসেছে পণ্যটির বুকিং দর। 

আন্তর্জাতিক বুকিং দর ও খরচ (পরিবহন ও পরিশোধন) যোগ করে বর্তমানে দেশে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু মিল পর্যায়ে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ আমদানিকারক (কারখানা মালিকরা) প্রতি মণ পাম অয়েলে মুনাফা করছে ১ হাজার টাকা।  

গত ২৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলে দুই দিনের মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠে দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। ওই সময় মাত্র দুই দিনেই ভোজ্যতেলের দাম মণে (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) ৮০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

ঘোষণার দিন ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ২০০ টাকায়। দুই দিনে দাম বেড়ে (১ মে) একই পাম অয়েলের দাম ঠেকে ৭ হাজার টাকায়। ২৮ এপ্রিল প্রতি মণ সয়াবিন ৬ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও ১ মে তা বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়।

কিন্তু গত চার মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমলেও এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম দিন দিন কমলেও তিন সপ্তাহ ধরে স্থির রয়েছে দেশীয় বাজারে।

আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী, গত চার মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩ হাজার ৫০০ টাকার উপরে। কিন্তু এই সময়ে দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম কমেছে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা।

ভোক্তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার সাথে সাথেই দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিশ্ব বাজারে কমলে দীর্ঘ কয়েক মাসেও দেশীয় বাজারে পণ্যের দামে প্রভাব পড়ে না। এভাবে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা।

এই বিষয়ে টিআইবি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তার কবির চৌধুরী বলেন, 'বিশ্ববাজারে বুকিং দর বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারকরা। একই সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম সমন্বয় করতে সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে চাপ সৃষ্টি করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বিশ্ববাজারে গত চার মাস ধরে পণ্যটির দাম কমলেও দেশীয় বাজারে সেই পরিমাণে দাম কমায় নি। প্রতি মণ ভোজ্যতেলে ১ হাজার টাকার বাড়তি মুনাফা করে ভোক্তাদের পকেট কাটছে কোম্পানিগুলো।'

এই বিষয়ে সিটি গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কারন বলেন, 'বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে পণ্যটির চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পণ্য রয়েছে তা আগের বেশি দামে কেনা। ফলে চাহিদা কমলেও আমদানিকারকরা পণ্যটির দাম কমাতে পারছে না। তবে বর্তমানে যে দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ের কম।' 

আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় প্রতিদিনই কমছে ভোজ্যতেলের দাম। মাত্র দশ দিনেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম কমেছে ৬০০ রিঙ্গিতের বেশি। যা গত চার মাসে কমেছে ৩ হাজার ৮০০ রিঙ্গিত।

এমপিওসি ডট ওআরজি ডট মাই এর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৮ সেপ্টেম্বর অপরিশোধিত পাম অয়েল বুকিং হয়েছে ৩ হাজার ৬৯০ রিঙ্গিতে। মাত্র দশদিন আগেও (২৪ আগস্ট) পাম অয়েলের বুকিং ছিল ৪ হাজার ৩০৮ রিঙ্গিত। সেই হিসেবে, দশদিনে বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের বুকিং দর ৬১৮ রিঙ্গিত কমে গেছে।

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল মার্চ-এপ্রিলে রেকর্ড দামে বিক্রির পর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের বাজার। এখন প্রতিদিনই কমছে পণ্যটির দাম। কিন্তু দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম তেমন কমেনি।

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বৃহস্পতিবার প্রতি মণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকা দামে।

দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'ভোজ্যতেলসহ যেকোনো পণ্যের দাম টানা উত্থানের পর কমে স্থিতিশীলতায় ফিরবে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। বিশ্ববাজারে কমে আসায় দেশীয় আমদানিকারকদেরও উচিত পণ্যটির দাম কমিয়ে আনা। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে সতর্কতার সাথে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দেশীয় বাজারে দাম সমন্বয়ে করতে হবে। কারণ বিশ্ববাজারে বর্তমান দরপতনও আমদানিকারকদের বড় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।'