ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০২৪ |

EN

বানিয়াচঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২

বানিয়াচঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ
হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম'র স্পেশাল এসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূরসহ গণমাধ্যমকর্মীদের উর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় ২নং বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের বিদ্যাভূষণপাড়া প্রকাশ চানপাড়া গ্রামে।

সাংবাদিক রাজীব নূর জানান, বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ীর ছবি তুলায় বাড়িটির দখলদার আব্দুল ওয়াহেদ ও ৩ ছেলে হামলা চালায়। এসময় তার সাথে হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তৌহিদ মিয়া, কালের কণ্ঠ'র বানিয়াচং উপজেলা প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া ও দেশসেবা পত্রিকার প্রতিনিধি আলমগীর রেজা ছিলেন।

হামলাকারীরা হামলার পাশাপাশি রাজীব নূরের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ধারণকৃত ছবি ডিলিট করে ফেলে। তিনি কোনক্রমে ফোনসেটটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন। হামলাকারীদের একজন আলমগীর রেজার উপর ইট দিয়ে মারাত্মক আঘাত করে। তিনি অল্পের জন্য প্রাণেরক্ষা পান।

তারা ৪ জনই হামলায় আহত হয়েছেন, তন্মধ্যে তৌহিদ ও আলমগীর একটু বেশি আহত বলেও রাজীব নূর জানান। তারা বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং বানিয়াচং থানায় তৌহিদ মিয়া মামলা দায়ের করবেন বলেও জানিয়েছেন।

তৌহিদ মিয়া জানান, তিনি হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। তার পিতার নাম মস্তু মিয়া। হবিগঞ্জ পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের উমেদনগরে তার বাড়ী। হামলার ঘটনায় তিনি বানিয়াচং উপজেলার চানপাড়া গ্রামের মৃত আঃ রেজাক মিয়ার পুত্র আব্দুল ওয়াহেদ (৬০), তার ৩ পুত্র ওয়ায়েছ মিয়া (৩০), ওয়ালিদ মিয়া (২৭) ও ওয়াসিফ মিয়া (২২) কে আসামি করে বানিয়াচং থানায় মামলা দায়ের করেছেন।


অভিযুক্ত আব্দুল ওয়াহেদ জানান, তিনি আজমিরীগঞ্জ ছিলেন। আজমিরীগঞ্জ থেকে বাড়ীতে এসে দেখেন কয়েকজন লোক অনুমতি না নিয়েই তার বাড়ীর ভেতরে ঢুকে এদিক-ওদিক ঘুরাঘুরি করছে এবং ছবি তুলছে।

তারা কারা এবং অনুমতি ছাড়া বাড়ীর ভেতরে ঢুকে এভাবে এদিক-ওদিক কেনো ঘুরাঘুরি করছেন এবং ছবি তুলছেন প্রশ্ন করতেই তারা বলেন, আমরা সাংবাদিক; রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ীর ছবি তুলতেছি। এটি রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ী এ কথা আপনাদেরকে কে বলেছে জিজ্ঞাসা করতেই আলমগীর নামে একজন আমাকে এবং আমার ছেলেদেরকে হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করে।

এরপরও সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় কোনো প্রতিবাদ করিনি, শুধু অনুমতি না নিয়ে তোলা আমার বাড়ীর ছবিটি ডিলিট করার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা ডিলিট না করায় আমরা মোবাইলটি নিয়ে ছবি ডিলিট করে মোবাইলটি ফেরত দিয়েছি। এখানে কোনো হামলার ঘটনাই ঘটেনি।

আপনার বাড়ী রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ী কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, না। তিনি বাড়ীটি এসএ রেকর্ডের মালিক মোহিনী বিশ্বাসের কাছ থেকে কিনেছেন বলে জানান।

মোহিনী বিশ্বাস ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের কোনো পূর্বসূরী অথবা উত্তরসূরী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোহিনী বিশ্বাসেরা রামনাথ বিশ্বাসের কেউ না। মোহিনী বিশ্বাসের পিতার নাম কি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারবোনা।

রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ী তার বাড়ীর কোন দিকে বা এলাকার কোথায় জিজ্ঞেস করলে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমার জানা নেই বানিয়াচংয়ের কোথায় রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ী।

এদিকে কুতুবখানী গ্রামের বাসিন্দা বানিয়াচং উপজেলা যুবলীগের সদস্য কাউসার মিয়া জানান, আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া যে বাড়ীতে বসবাস করেন সেটিই রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ী। জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তিনি এই বাড়ীটি দখল করে আছেন।

এটি বিদ্যভূষণপাড়া হলেও তিনি সমস্ত কাগজপত্রে চানপাড়া হিসেবে লিখেয়েছেন। এই বাড়ী দখলমুক্ত করে রামনাথ বিশ্বাসের নামে জাদুঘর করার জন্য অনেক আন্দোলন হয়েছে।

অতীতে বহুবার সাংবাদিকরা এই বাড়ীর ছবি তুলে এবং ভিডিও করে পত্রপত্রিকায় এবং টেলিভিশনে সংবাদ করেছেন উল্লেখ করে কাউসার জানান, ওই সময় আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া সাংবাদিকদের উপর হামলা করার সাহস করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে ৫নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হয়ে ক্ষমতাধর বনে গেছেন। ক্ষমতার দম্ভে এখন তিনি সাংবাদিকসহ কাউকে বাড়ীতে ঢুকতে দেননা, ছবি তুলতো এবং ভিডিও করতেও দেননা।

প্রায়ই সাংবাদিকদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদানসহ দুর্ব্যবহার করেন। এব্যাপারে এখন বিজনেস টিভি চ্যানেলের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি কাজল সরকার জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর তিনি ও দেশ টিভির হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আমির হামজা রামনাথ বিশ্বাসের উপর ডকুমেন্টারি তৈরি করতে ওই বাড়ীতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকেও ভিডিওচিত্র ধারণ করতে ওয়াহেদ বাধা প্রদানসহ অপদস্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেন।

এব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি রাসেল চৌধুরী ফোন করে সাংবাদিকদের উপর হামলার কথা জানিয়েছেন।অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। 

এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে রাতে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয় সভায় হামলায় জড়িতদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়,  অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন সাংবাদিক নেতারা।