মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, যারা বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির কাছে সরকার নতি স্বীকার করেছে। তারা চেতনার বাহিরে গিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস নীতি অনুসরণ করছে।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে নয়টি আদিবাসী ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ আয়োজনে সাতক্ষীরার নরেন্দ্র মুন্ডা হত্যা ও আদিবাসী ভূমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সুলতানা কামাল বলেন, নারীর সমতা, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও পাঠ্যপুস্তকে সাম্য নীতি থেকে সরকার সরে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। অঙ্গীকার রক্ষা, জনগণের অধিকার ও সম্মান রক্ষার বিষয়টি তারা যেন দেখেন।
‘আমরা উন্নয়ন চাই। যদি উন্নয়নের সুফল সব জনগোষ্ঠী সমানভাবে না পায় তাহলে সেটি কিসের উন্নয়ন। আমরা স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার চাই। একই সঙ্গে সব মানুষের সমান অধিকার চাই। দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার কষ্টে এসব নির্যাতিতরা ভুগছে। আদিবাসীদের উপর নির্যাতন হত্যা, ভূমি দখল চলতেই থাকবে এটা হতে পারেনা। তারা আন্দোলন করতে করতেই জীবন পার করবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষা করা। আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। আর এই দায়ভার রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদেরই বহন করতে হবে।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকার নিন্দা জানাতে জানাতে আমরা ক্লান্ত। আমরা চাই পুলিশ নিজেদের দিকে ফিরে দেখুক। কেন সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চাইতে হবে। সার্বিকভাবে পুলিশ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেনি।
ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী ফনিন্দ্রনাথ বলেন, গত ১৯ আগস্ট জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী মহলের হামলায় ১২ জন মুন্ডা আদিবাসী আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার চাচা নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা মারা যান। জমিটি নিয়ে মামলা চলমান। আমরা বলেছিলাম কোর্টের রায় যা হবে তা মেনে নিবো তার আগে কিছু নয়। কিন্তু তারা তা না মেনে মারধর করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউ হামলার পর এগিয়ে আসেননি। ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে।
হত্যা মামলার চার আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও প্রধান আসামি রাশিদুল ও এবাদুলকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা অতিদ্রুত এদের বিচার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধকার আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অভিযোগ করে বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয়। স্থানীয় জনগণ বলছে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। মূল আসামিরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেছে অনেক দেরিতে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আহত মুন্ডা নারী রিনা মুন্ডা, মুন্ডাদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আশিক-ই-এলাহীসহ ভুক্তভোগীরা।