ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার: সিআইডি

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২

হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার: সিআইডি
মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি কারবার করা ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেশে ডলারের দাম বাড়াসহ নানা কারণে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এতে বেরিয়ে আসে, গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। এছাড়া এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডি করে এমন পাঁচ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা এমএফএস সেবা বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ওই পাঁচ হাজার এজেন্ট গেল চার মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকােএবং গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার ১৬ জনের মধ্যে ছয়জন বিকাশ এজেন্ট, তিনজন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, তিনজন বিকাশের ডিএসএস, দুজন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী এবং একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী।

সিআইডি প্রধান বলেন, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনীতির এ ঝুঁকি মোকাবিলায় হুন্ডি কার্যক্রমের বিষয়ে নজরদারি শুরু করে সিআইডি। অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং দেশের বাইরে অবস্থানরতদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে। 

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দেশে না পাঠিয়ে এর সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে এবং দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপে আছে অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীরা। তারা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ এমএফএস এজেন্টদের প্রদান করে। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর নিকট হতে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।

এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(শ) (১৪) ধারা অনুযায়ী অপরাধ। যা একই আইনের ৪(২) এর ধারায় দণ্ডনীয়। এ বিষয়ে মামলা রেকর্ডসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আক্তার হোসেন (হুন্ডি এজেন্ট), দিদারুল আলম সুমন (হুন্ডি এজেন্ট), খোরশেদ আলম ইমন (হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী), রুমন কান্তি দাস জয় (বিকাশ এজেন্ট), রাশেদ মাঞ্জুর ফিরোজ (বিকাশ এজেন্ট), মো. হোসাইনুল কবির (বিকাশ ডিএসএস), নবীন উল্লাহ (বিকাশ ডিএসএস), মো. জুনাইদুল হক (বিকাশ ডিএসএস), আদিবুর রহমান (বিকাশ ডিএসও), আসিফ নেওয়াজ (বিকাশ ডিএসও), ফরহাদ হোসাইন (বিকাশ ডিএসও), আবদুল বাছির (বিকাশ এজেন্ট), মাহাবুবুর রহমান সেলিম (বিকাশ এজেন্ট), আবদুল আউয়াল সোহাগ (বিকাশ এজেন্ট) ও ফজলে রাব্বি (বিকাশ এজেন্ট)।

তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, চার সিমে তিন কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি এবং ৩৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট চারটি মামলা করেছে সিআইডি।