লুঙ্গি পরাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই জন গুরুত্বরসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের নিচে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত সবাই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
তথ্য মতে, গত ২৭ আগস্ট রাতে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হুজ্জাতুল্লাহ ভূঁইয়া লুঙ্গি পরে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে আসেন। রুমে ভর্তি পরীক্ষার্থী আসায় তাকে রুমে রেখে কিছুসময়ের জন্য লুঙ্গি পরে বাইরে বের হয় বলে জানায় হুজ্জাতুল্লাহ। এসময় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম রিঙ্কু তাকে ডেকে লুঙ্গি পরে বাইরে আসার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে তারা বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে রিংকু তাকে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ হুজ্জাতুল্লাহর।
পরে ১ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে হলে ঢোকার সময় হুজ্জাতুল্লাহ এবং তার বন্ধু আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আল আমিনসহ জুনিয়রদের মারধরের শিকার হন বলে অভিযোগ রিংকুর। পরে এ ঘটনার জেরে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পরে আল আমিনসহ তার বন্ধুদের মারধর করে সিনিয়র শিক্ষার্থী রিংকু ও তার বন্ধুরা। এ সময় তার সাথে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হামজাসহ তার বন্ধুরা ছিলেন বলে অভিযোগ আল আমিনের। পরে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মজুমদারসহ সিনিয়র কর্মীরা সবাইকে হলে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ডাইনিংয়ে খেতে গেলে ফিন্যান্স এন্ড ব্যংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আশিক মারধরের শিকার হন। এ সময় আল আমিনের বন্ধু হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শুভ্র ভৌমিক, অর্ক ও আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সুমন লাঠি দিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ আশিকের।
আশিককে মারধরের ঘটনা জানার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে তার বন্ধুরা লাঠি, স্টাম্প, রড নিয়ে বের হন। এদিকে জিয়াউর রহমান হলে আল আমিনের বন্ধু ও সিনিয়ররাও রড, লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন। পরে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতসহ সিনিয়র কর্মীরা দুই পক্ষকে শান্ত করেন। কয়েক দফার মারামারিতে প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, গতদিনের লাইট বন্ধ করে মারামারির ঘটনায় তারা আমাদেরকে সন্দেহ করে। তারা ভেবেছে আমরা তাদেরকে মেরেছি। সেই ঘটনার জের ধরে তারা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। স্টাম্প দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আমাকে আঘাত করা হয়েছে। একপর্যায়ে সেন্সলেস অবস্থায় বন্ধুরা আমাকে রুমে নিয়ে আসে।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম রিঙ্কু বলেন, গতদিনের চড় মারার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আজকে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে বিরক্ত করার জন্য নানা কথা বলতে থাকে। একপর্যায়ে কথা কাটাকাটির জেরে হাতাহাতি হয়। তবে আমাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, সিনিয়র এবং জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝামেলার রেশ ধরে এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানি। লুঙ্গি পরার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলে হলে মারামারি দুঃখজনক। জানার পর বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জুম্মার নামাজের পর শুনলাম অনুষদ ভবনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে বিকেলে জানলাম জিয়া হলেও মারামারি হয়েছে। এসব ঘটনায় আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।