ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর পরই পর্তুগালের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ!

বিশ্ব বাংলা ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২২

অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর পরই পর্তুগালের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ!
করোনা মহামারি মোকাবেলায় পর্তুগালের সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারতা তেমিদো পদত্যাগ করেছেন।  ৩০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী আন্তনীয় কস্টার কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। 

স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবীদের বেতন ভাতা, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, কাজে বাধ্যবাধকতা এবং পেশাগত স্বীকৃতির বিষয়ে সরকারের সাথে দফায় দফায় বৈঠক এবং এ বিষয়ে সমস্যার সমাধান না হওয়াসহ ২৯ আগস্ট চিকিৎসা অবহেলার কারণে এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর পর তিনি পদত্যাগ করেন বলে এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। 

ওই অন্তঃসত্ত্বা তরুণী ভারতীয় পর্যটক ছিলেন বলে জানা গেছে। পযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পর্তুগালের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে এক অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরেই পদত্যাগ করেন মারতা তেমিদো। 

দেশে প্রবল সমালোচনার মুখে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৪ বছরের এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণী ভারত থেকে পর্তুগালে ঘুরতে গিয়েছিলেন ।  অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার পর্তুগালের এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে হয়। 

তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে পথেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। 

এদিকে, তার মৃত্যুর খবর সামনে আসার পর মারতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ কয়েকদিন আগেই চিকিৎসকের অভাবে পর্তুগালে প্রসূতি বিভাগের জরুরিকালীন পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মারতা।  সেই জন্যই ওই ভারতীয় পর্যটক চিকিৎসা পাননি বলে জানা গেছে।  সেই কারণেই অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যু হয় বলে দাবি করছেন অনেকে।

অবশ্য পর্তুগালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর থেকেই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তা নিয়ে ক্ষোভ ছিল। ভারতীয় অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর মৃত্যুর পর সেই ক্ষোভকেই আরও উসকে দেয়। সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। 

মারতা তেমিদো ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। করোনা মহামারিকালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যখন স্বাস্থ্য খাতের সাথে অর্থনীতির সমন্বয় করতে ব্যর্থ ছিল, সেখানে তিনি পর্তুগালের স্বাস্থ্য খাতের সবগুলো বিষয় সাফল্যের সাথে সমাধান করেন। ফলে তিনি সরকারের মন্ত্রিসভা এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

তিনি যে সরকার প্রধানের কাছে কতটা আস্থাশীল ছিলেন তার আভাস পাওয়া যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তার উত্তরসূরী নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে। তিনি বলেন, মারতা তেমিদোর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়নি। সুতরাং এই দায়িত্বে নতুন মুখ নির্ধারণে কিছুটা সময় লাগবে।

এদিকে দলীয় মুখপাত্র জানান, আমরা দুঃখজনকভাবে যোগ্য লোককে হারিয়েছি।

বিরোধীদলের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফার্নান্দো লিয়াল দা কস্তা বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তন হলেও সমস্যার সমাধান দ্রুতই হবে না। কেননা সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের, মারতা তেমিদোকে সবাই মনে রাখবে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা হিসেবে।

মারতা তেমিদো পর্তুগালের শিক্ষা শহর খ্যত কুইমরা জেলায় ১৯৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় কুইমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং আইন বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

তাছাড়া তিনি নোভা ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মন্ত্রিত্ব গ্রহণের আগে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালক পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।