ভারতের মতো জনবহুল দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমতাবস্থায়, ২০১১ সালের জনগণনায় “শিক্ষার স্তর এবং বিভিন্ন গতিবিধির পরিপ্রেক্ষিতে রোজগারহীন”-এর পরিসংখ্যান রীতিমতো চমকে দেবে। এই পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে চার লক্ষেরও বেশি ভিক্ষুক ও অকর্মণ্য এবং রোজগারহীন মানুষ রয়েছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এঁদের মধ্যে প্রায় ২১ শতাংশ হলেন শিক্ষিত ভিক্ষুক। মূলত, ভিক্ষাবৃত্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসার পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এর পেছনে কিছু অদ্ভুত কারণও রয়েছে।
এই পরিসংখ্যানগুলি থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রাথমিক শিক্ষার পরেও ওই ব্যক্তিরা কর্মসংস্থান করতে পারেননি। যে কারণে তাঁদের কাছে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এদিকে, ডিগ্রিধারীদের ভিক্ষা করার মত ঘটনা একটি গুরুতর দিক। যা দেশের দুর্বল কর্মসংস্থান পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে। এমতাবস্থায়, কর্মসংস্থানের অভাব এবং পর্যাপ্ত সামাজিক সমর্থন না পাওয়ার কারণে ওই ব্যক্তির ভিক্ষার পথ বেছে নেন।
অনেক ভিক্ষুক ইংরেজিতেও কথা বলেন: এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ভারতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যার পাশাপাশি শিক্ষিত ভিক্ষুকের সংখ্যাও বাড়ছে। এমনকি, একাধিক বড় শহরে কিছু ভিক্ষুককে ইংরেজি বলতেও শোনা যায়। ২০১১ সালের “শিক্ষার স্তর এবং বিভিন্ন গতিবিধির পরিপ্রেক্ষিতে রোজগারহীন”-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিক্ষিত ভিক্ষুকদের মধ্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এমনকি ডিপ্লোমা রয়েছে এমন ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
২১ শতাংশেরও বেশি দ্বাদশ পাশ: পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪,১৩,৬৭০ জন ভিক্ষুকের মধ্যে ২,২১,৬৭৩ জন পুরুষ রয়েছেন। পাশাপাশি, মহিলা ভিক্ষুকের সংখ্যা হল ১,৯১,৯৯১ জন। জেনে অবাক হবেন যে, এঁদের মধ্যে প্রায় ২১ শতাংশ দ্বাদশ পাশ করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার জনের ভোকেশনাল ডিপ্লোমাও রয়েছে। এমনকি, শিক্ষিত রাজ্যগুলিতেই বেশিসংখ্যক শিক্ষিত ভিক্ষুকের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
রাজ্যগুলির সামগ্রিক চিত্র: রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গে জানাতে গেলে বলতে হয় যে, ভারতে সবচেয়ে বেশি ভিক্ষুক রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মূলত, আমাদের রাজ্যে ৮১,২৪৪ জন ভিক্ষুক রয়েছেন। এরপর উত্তরপ্রদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা হল ৬৫ হাজারেরও বেশি। পাশাপাশি, বিহারে প্রায় ৩০ হাজার, অন্ধ্রপ্রদেশে ৩০ হাজার, মধ্যপ্রদেশে ২৮ হাজার এবং রাজস্থানে প্রায় ২৬ হাজার জন ভিক্ষুক রয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ভিক্ষুকের সংখ্যা খুবই কম। লাক্ষাদ্বীপে দু’জন, দাদার নগর হাভেলিতে ২০ জন, দমন ও দিউতে ২৫ জন এবং আন্দামান ও নিকোবরে ৫০ জন ভিক্ষুক রয়েছেন।
দিল্লি ও আসামেও সংখ্যাটা কম নয়: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রায় ২৩ হাজার ভিক্ষুক রয়েছেন। পাশাপাশি, চণ্ডীগড়ে মাত্র ১২১ জন ভিক্ষুক রয়েছেন। অন্যদিকে উত্তর-পূর্বের আসামে আবার এই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ২২ হাজারে। এছাড়াও, মিজোরামে মাত্র ৫৫ জন ভিক্ষুক রয়েছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল যে, ভারতের উত্তর-পূর্বে মহিলা ভিক্ষুকের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি।
শহরগুলির অবস্থা আরও উদ্বেগজনক: দেশের বড় শহরগুলিতেও শিক্ষিত ভিক্ষুকের সংখ্যা অবাক করবে সবাইকে। ব্যাঙ্গালোরের মতো শহরে ভিক্ষাবৃত্তি কার্যত এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সেখানে ৮০ জন ভিক্ষুকের স্নাতক এবং ৩০ জনের ডিপ্লোমা রয়েছে। অপরদিকে, ১৯৫ জন ভিক্ষুক দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এছাড়াও, মহীশূরে ১৭০ জন ভিক্ষুক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা করেছেন। যাদের মধ্যে ৭০ জন মহিলা।
শুধু তাই নয়, কেরালার মতো শিক্ষিত রাজ্যে ভিক্ষুকদের মধ্যে ৪২ শতাংশই শিক্ষিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেখানে ৩,৮০০ জনের মধ্যে ১,৬০০ জন শিক্ষিত। তাঁদের মধ্যে আবার ১,২০০ জন দশম শ্রেণির নিচে পড়াশোনা করেছেন, ২০০ জন স্নাতক, ২০ জন ডিপ্লোমা, এবং ৩০ জন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তবে একটি উদ্বেগের বিষয় হল, বেশিরভাগ শিক্ষিত ভিক্ষুক এই কাজটিকে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত প্রথাগত কাজ তথা চাকরির চেয়ে ভালো মনে করেন। এমনকি, এই শিক্ষিত ভিক্ষুকরা চাকরি বা অন্য কোনো ব্যবসার বিকল্প পেয়েও এই কাজ ছাড়তে চাইছেন না।