সেনাবাহিনী-শাসিত মিয়ানমারের একটি আদালত দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে দুর্নীতির মামলায় নতুন করে আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। সোমবার মিয়ানমারের কারাবন্দি গণতন্ত্রকামী এই নেত্রীকে দুর্নীতির চারটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।
মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে সু চির দণ্ডের খবর জানিয়েছে। ৭৭ বছর বয়সী সু চিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রচারে তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ডাও খিন কি ফাউন্ডেশনের তহবিলের অপব্যবহার, সরকারি মালিকানাধীন জায়গা বিশেষ ছাড়ে লিজ গ্রহণ এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে বাড়ি তৈরির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মিয়ানমারের নোবেলজয়ী এই নেত্রীর বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা সরকার দুর্নীতি থেকে শুরু করে নির্বাচনে জালিয়াতিসহ অন্তত ১৮টি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বমোট ১৯০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার।
তবে সু চি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছেন। বর্তমানে দেশটির রাজধানী নেইপিদোর একটি নির্জন কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। অন্যান্য কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে তাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে সেনাবাহিনী গত বছর ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ব্যাপক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি জয় পাওয়ার পর সেনা-সমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলো জালিয়াতির অভিযোগ করে। পরে বিরোধীদের এই অভিযোগে সমর্থন জানিয়ে সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী।
জান্তা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির হাজার হাজার মানুষকে কারাবন্দী এবং অসংখ্য মানুষের ওপর সৈন্যরা নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে গিয়ে সেনাবাহিনী হত্যা-ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধও সংঘটিত করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সু চির গোপন বিচারকে ‘প্রহসনমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘মামলার রায় সু চির অধিকারের ওপর ভয়ানক হামলা এবং তাকে ও এনএলডিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ।’
এই মামলার রায়ের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুনের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। যদিও এর আগে সু চির মামলা স্বাধীন বিচার বিভাগ যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে পরিচালনা করছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে মিয়ানমারের এই নেত্রীর মামলায় বিদেশিদের সমালোচনাকে হস্তক্ষেপের সামিল বলে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
সূত্র: রয়টার্স।