নাটোরে কলেজছাত্রকে বিয়ে করে আলোচনায় আসা শিক্ষিকা খাইরুন নাহারের লাশ উদ্ধার করা হয় রোববার। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি কি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন নাকি ‘হত্যার’ শিকার হয়েছেন তা নিয়েই সরব অনেকে। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। রোববার (১৪ আগস্ট) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে খাইরুন নাহারের মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘অধ্যাপক খায়রুন নাহারকে মনে হচ্ছে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে তার বয়সে ছোট স্বামী মামুন। স্বামী কেন বয়সে ছোট, এটি ছিল খায়রুনের অপরাধ। পুরুষেরা যখন বয়সে ছোট মেয়েদের বিয়ে করে, তখন তো সেইসব পুরুষকে মানুষ অপমান করে না! এখন তো লোকে বলবে, পুরুষকে স্ত্রীর চেয়ে বয়সে বড় হতেই হয়- এটিই সমাজের নিয়ম। না, এটি সমাজের নিয়ম নয়। এটিকে নিয়ম বানানো হয়েছে। কিন্তু এক তুড়িতে নিয়ম বদলে যেতে পারে। নিয়ম মানুষই তৈরি করে, নিয়ম মানুষই ভাঙে।
স্ত্রী বয়সে বড় হবে, এটি যদি মানতে না পারো, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রিয় নবীর সঙ্গে বিবি খাদেজার বিয়েও মানো না। তোমরা তো তবে মুসলমানই নও। তোমাদের নবী যে পথ দেখিয়ে গিয়েছেন, সেই পথেই তো হাঁটতে চাও। তাহলে স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় স্ত্রীকে মেনে নিতে পারো না কেন? আমার মনে হয় না মানুষের মানা না মানা নিয়ে খায়রুন নাহারের কোনও সমস্যা ছিল। তিনি সমাজের লোকদের বদ চরিত্রের কথা জেনেই তো মামুনকে বিয়ে করেছিলেন। এমন আত্মবিশ্বাস যার, তিনি আত্মহত্যা করবেন কোন দুঃখে!
ময়নাতদন্ত বলছে, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মামুন সাহেব স্ত্রীকে হত্যা করে রাত ২টার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সকাল ৬টায় ফিরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না ঝুলিয়ে আগুনে ওড়না আর ফ্যানের কিছুটা পুড়িয়ে একটি আত্মহত্যার দৃশ্য হয়তো সাজিয়েছেন। হয়তো রাতে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকেই এই বুদ্ধিটা নিয়ে এসেছেন।
যেহেতু খায়রুনের ওপর সমাজ ক্ষিপ্ত ছিল, মামুনকে বয়স্ক নারীর ভিক্টিম হিসেবে দেখেছে। তাই মামুনের শাস্তি হোক তা হয়তো লোকেরা চাইবে না। ছলে-কৌশলে মামুনকে বাঁচাবার চেষ্টা চলবে।
প্রশ্ন হলো, মামুন কেন খুন করবে খায়রুনকে? খায়রুনের দয়ায় সে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানতো পেয়েছে। এমনকি মোটর সাইকেল পেয়েছে, পড়ালেখার খরচপাতি পেয়েছে। খায়রুন বেঁচে থাকলে আরও সুযোগ সুবিধা পেত। নিশ্চয় কোনও বদ উদ্দেশ্য তার ছিল খায়রুনকে হত্যা করার। আমি ভুল হতে পারি। কিন্তু খবর যা পেয়েছি, তা শুনে এমনই মনে হলো।’