ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০২৪ |

EN

বাতিল হচ্ছে এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প

এলএনজি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, বিশ্ববাজারে দামও বেশি। তাই পায়রা ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে যাচ্ছে সরকার।


ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১৩, ২০২২

বাতিল হচ্ছে এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প

ফাইল ছবি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ২০১৭ সালে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) পায়রা ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। জমি বরাদ্দ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেশ বেড়ে যাওয়ায় এ প্রকল্প থেকে সরে আসছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ওই বছর জার্মানিভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স এজির সঙ্গে চুক্তি করে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (নওপাজেকো)। পরে ২০২০ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি এবং বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগকারী চীনের সিএমসির সঙ্গে আরেকটি বহুপক্ষীয় চুক্তির খসড়া তৈরি হয়। চুক্তিটি না করার অনুরোধ জানিয়ে নওপাজেকো গত মাসে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বিদ্যুৎ বিভাগ।

চিঠিতে নওপাজেকো বলেছে, সরকার ইতিমধ্যে পায়রা উপকূলে গভীর সমুদ্রে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আলাদা টার্মিনাল নির্মাণের দরকার নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এলএনজি সরবরাহে বহুপক্ষীয় চুক্তির কিছু ধারা আর প্রাসঙ্গিক নয়। এ অবস্থায় বহুপক্ষীয় চুক্তিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নওপাজেকো বোর্ড।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে তিনটি পর্যায়ে মোট ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল।

নওপাজেকো বলছে, আপাতত প্রথম পর্যায়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে বাকি দুটি ইউনিট করা যেতে পারে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারির দুই বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। পরিকল্পনা অনুসারে শিল্প এলাকা হয়নি। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। তাই ২০৩০ সালের আগে আর নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই। এ কারণে ৩৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে।

নওপাজেকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম খোরশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা যাবে। বিদ্যুৎ প্রকল্পে যারা কাজ করার কথা ছিল, তারাও কোনো আপত্তি জানায়নি। তাই বিদ্যুৎ বিভাগে বহুপক্ষীয় চুক্তিটি না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নওপাজেকো সূত্র বলছে, ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। চারটি সমীক্ষা ও ভূমি উন্নয়নে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এসব তথ্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার করা যাবে। সেখানে এখন সৌরবিদ্যুৎ নির্মাণের প্রস্তাব উঠেছিল। তবে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে এই প্রস্তাবে সায় মেলেনি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, এলএনজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে ২৮ থেকে ২৯ টাকা খরচ পড়বে। তাই এই প্রকল্প নিয়ে এখন আর চিন্তা করছে না সরকার।

বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে তিনটি প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলো আগামী বছর উৎপাদনে আসতে পারে। বেসরকারি খাতে আরও তিনটি কেন্দ্র চুক্তির অপেক্ষায় আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে যৌথ মালিকানায় বড় আকারের দুটি এবং সরকারিভাবে আরও সাতটি এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এর আগে গত বছর কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন দেয় বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল। এতে বলা হয়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমদানির কয়লায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৭ টাকা ৭৮ পয়সা খরচ পড়ছে। আর দেশি গ্যাসের সঙ্গে মিশ্রণ করে এলএনজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ইউনিটে খরচ হবে ৫ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে ৬ টাকা ২০ পয়সা। এলএনজির তুলনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৫ গুণ বেশি জমি লাগে। এলএনজি পরিবেশবান্ধব। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।

তবে পাওয়ার সেলের এই প্রতিবেদনের বিরোধিতা করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, এলএনজি আমদানিতে প্রতি ইউনিটের গড় খরচ ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এলএনজি আমদানি কমানো হয়েছে। এ অবস্থায় এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ভালো হবে না। একই কারণে পরিকল্পনায় থাকা এলএনজিভিত্তিক ৬ হাজার ৪৬৮মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কোনো যুক্তি নেই।

সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকারের সরে আসার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। 

এখন সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মিলে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যেতে পারে। পরিকল্পনায় থাকা অন্যান্য এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎকেন্দ্র করা উচিত। এতে এলএনজি আমদানি করতে হবে না এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ কমবে।

সূত্র: প্রথম আলো