গ্রাহকদের প্রতারণার জন্য দুটি মামলার শিকার হওয়া পঞ্জি স্কিম-ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি রিংআইডি এবার বিনিয়োগ করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। জালিয়াতির ৩৩ কোটি টাকা অবৈধভাবে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি। অবৈধ এ বিনিয়োগের সন্ধান পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগের সাইবার পুলিশ সেন্টার।
রিংআইডি এর দুটি সাবসিডারি- রিংআইডি বিডি এবং রিংআইডি ডিস্ট্রিবিউশন এর সাথে যুক্ত হয়ে তিনটি সিকিউরিটি কোম্পানির সহায়তায় অবৈধ বিনিয়োগ করেছে। কোম্পানিগুলো হলো- সান্তা সিকিউরিটিজ, আরএনআই সিকিউরিটিজ এবং ভার্টেক্স স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ।
বাংলাদেশ ফিন্যন্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (বিএফআইউ) দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে অবৈধ এসব বিনিয়োগের সন্ধান পেয়ে মামলা করেছে সিপিসি।
মামলার বাদি সিপিসির এসআই মো. আল ইমাম টিবিএসকে বলেন, "আমরা অর্থপাচার আইনে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে ৩৭.৪৯ কোটি টাকা লন্ডারের অভিযোগ এনে সম্প্রতি গুলশান থানায় একটি মামলা করেছি।"
বিস্তারিত তদন্তে রিংআইডির অবৈধ বিনিয়োগের যাবতীয় তথ্য উঠে আসবে বলে জানান তিনি।
এ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, রিংআইডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন ইসলাম এবং পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম।
শরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী বর্তমানে কানাডায় আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা কয়েকটি শেল কোম্পানি ব্যবহার করে অনিয়ম করেছেন।
উরি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখার মাধ্যমে তারা 'নেচারস্কেপ লিমিটেড' নামক একটি অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছে। এর মধ্যে 3.5 কোটি টাকা পরে শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য শান্তা সিকিউরিটিজে স্থানান্তর করা হয়।
একই ব্যাংকের 'অ্যাডর্ড এস্টেট ডেভেলপমেন্ট' নামে একটি অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়, যার মধ্যে ১ কোটি টাকা শান্তা সিকিউরিটিজে এবং ২ টাকা আরএনআই সিকিউরিটিজে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়।
অন্য একটি লেনদেনে, রিংআইডি অবৈধভাবে 'অ্যাডর্ড ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড' এর অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছে। যার মধ্যে ১.৫ কোটি টাকা এবং ৪ কোটি টাকা পরে যথাক্রমে ভার্টেক্স স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ এবং আরএনআই সিকিউরিটিজে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ বলছে, আত্মসাতের উদ্দেশ্যে 'রেভারি ইঞ্জিনিয়ার্স' এর অ্যাকাউন্টে রিংআইডির সরাসরি ৩৫ লাখ টাকা স্থানান্তরের প্রমাণও পেয়েছে তারা।
সিআইডি বলছে, কোম্পানিটি গ্রাহকদের সিলভার আইডি, গোল্ড আইডি, প্রবাসী গোল্ড আইডি ও প্রবাসী প্লাটিনাম আইডি খুলতে উদ্বুদ্ধ করতো। এসব আইডি খুলতে গ্রাহকদের প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হতো।
পরিচয়পত্রধারীরা ভিপিএনের মাধ্যমে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখতেন, তার বিনিময়ে লাভ পেতেন। কিন্তু সে টাকা দেশের আনার বাধ্যবাধকতা থাকলেও রেমিটেন্সের মাধ্যমে টাকা আসার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এভাবে গ্রাহকদের উপার্জিত এসব বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না এনে অবৈধভাবে বিদেশের কোন একাউন্টে সরিয়ে ফেলেছে রিংআইডি।
এছাড়াও রিং আইডির অ্যাপে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে এক ধরনের ভার্চুয়াল কয়েন কেনা বেচা হয়েছে। যদিও ভার্চুয়াল ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেনের অনুমোদনের তথ্য পায়নি সিআইডি।
২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রিংআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে কোম্পানির এক গ্রাহক। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কন্ট্রোল অ্যাক্টের অধীনে ভাটারা থানায় দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি আইরিন ইসলাম ও তার স্বামী শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
রিংআইডি ছাড়াও এই দম্পতি ক্লাউড টেল লিমিটেড (একটি ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) অপারেটর) এবং ভিশন টেল লিমিটেড (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর) এর মালিক। দুজনই আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ভয়েস কলের সাথে কাজ করেছেন।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, কোম্পানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কলিং ব্যাবসা পরিচালনা করলেও বার্ষিক লাইসেন্স ফি, লাভের অংশ এবং বিলম্ব ফি এর ২৪০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে পরিশোধ করেনি।
সূত্র: টিবিএস