বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার দেশকে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভান্ডার এখন শূন্য প্রায়। সরকার রিজার্ভের ভুল তথ্য দিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। সরকার নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ভিন্ন।
বুধবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকার প্রধান মিথ্যার ওপর বসে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন। তিনি ২৭ জুলাই বলেছিলেন, আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ছয় থেকে নয় মাসের জন্য খাবার আমদানি করতে পারবো। তার একদিন পরে ২৮ জুলাই বললেন, তিন মাসের রিজার্ভই যথেষ্ট। কিন্তু জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, "আমাদের তহবিল খালি হয়ে যাচ্ছে।" পরিকল্পনামন্ত্রী গতকাল বলেছেন, "আমরা এখন একটু অসুবিধায় পড়ে গিয়েছি। টাকার ঘাটতি পড়ে গেছে।" বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেছেন, অবশ্যই দেশের অর্থনীতি চাপে আছে।
গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী ও গভর্নরের এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে পরিস্থিতি অতি ভয়াবহ। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, "দেশের ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভও এখন অবশিষ্ট নেই। সরকারের কাছে দেশ চালানোর মতো টাকাও নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভয়াবহভাবে বিপদের সম্মুখীন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন তাদের সামনে হাজির হচ্ছে নিত্য নতুন সঙ্কট। এমনিতে দ্রব্যমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পরিবহন, লোডশেডিং সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের স্মরণকালের সর্বোচ্চ সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি। এর প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। গরীব ও সীমিত আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা এতটা সঙ্গীন হয়ে পড়েছে যে, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কোনো একক উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা গণধিকৃত নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার। সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। ফলে তারা হুমকী ধামকি থেকে শুরু করে প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা করা শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজপথে থেকে কথা দিয়ে কিভাবে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হয় সেটি বলেননি, সেই দৃষ্টান্তও তাদের আছে। বারবার তাদের বিশ^াসঘাতকতার কারণে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমিতে তারা গণতন্ত্রের শেকড় গজাতে দেয়নি। বাকশাল, নিশিরাতের নির্বাচন, বিনা ভোটের নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ সেটিরই উদাহরণ।
রিজভী বলেন, ডলার সংকটের কারণে ডিজেল কেনা যাচ্ছে না। ডিজেলের অভাবে অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এখন তীব্র তাপদাহের সময়ে লোডশেডিং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ১ ঘন্টার কথা বলে এখন গড়ে সারাদেশে ৭/৮ ঘন্টার বেশী লোডশেডিং করা হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা আরো শোচনীয়। ডলার সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলপিজি গ্যাস নিয়মিত কেনা যাচ্ছেনা। বেড়েই চলেছে ডলারের দাম।