ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

আন্তর্জাতিক মানাবপাচারকারী চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ২

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, আগস্ট ৮, ২০২২

আন্তর্জাতিক মানাবপাচারকারী চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ২
র‍্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর পল্টন থানা এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা আবুল হোসেনসহ (৫৪) দুজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ভুক্তভোগী ৩ নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ‎মানবপাচারকারী চক্রের টার্গেট দরিদ্র মানুষ। পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষগুলোকে ফাঁদে ফেলে অন্ধকার জগতে নিয়ে যাচ্ছে। পাচারকারীদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে এসব মানুষ। যার অধিকাংশই নারী। এসব নারীদের বিদেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয় এবং জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ঢাকার পল্টন থানাধীন ৬৭, নয়া পল্টনস্থ সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সের ৬ষ্ঠ তলায়, কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য মূলহোতা মো. আবুল হোসেন (৫৪) (পিতা বাহার আলী, বাড্ডা, ঢাকা) এবং তার সহযোগী মোছা. আলেয়া বেগমকে (৫০) (স্বামী-আনোয়ার দেওয়ান, জাজিরা, শরিয়তপুর) গ্রেপ্তার করে। এ সময় ধৃত আসামিদের থেকে ৩১টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন ডকুমেন্ট ২২ পাতা, ২টি মোবাইল, ৩ টি সিমকার্ড, ৩ জন নারী ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়।

আসামি আবুল হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ বৈধ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড  এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে নারী পাচার ও নির্যাতনের মতো এমন জঘন্য অপকর্ম করে আসছে। সে মূলত এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার এ কাজের অন্যতম সহযোগী আলেয়া বেগমসহ অসংখ্য দালাল রয়েছে। দালালদের মাধ্যমে সে মূলত সমাজের বেকার, অল্পশিক্ষিত, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বিবাহিত ও তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে ও মহিলাদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অধিক বেতনের চাকরি, বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা, রাজকীয় থাকা-খাওয়া সুবিধা, স্মার্টফোন নেয়া এবং সৌদিতে হজ করার মতো ধর্মভিত্তিক লোভনীয় চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, বিদেশে যাওয়ার পর প্রথমে তারা ভুক্তভোগীদের জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখে এবং পরবর্তীতে ২-৩ দিন পর ঐ সমস্ত দেশের নাগরিকরা ভুক্তভোগীদের পছন্দ করে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় নেয়ার পর তাদের দ্বারা সব ধরনের কাজ করানো, খাবারের উচ্ছিষ্ট খেতে দেয়া বা কোনো প্রকার খাবার খেতে না দেয়া এবং অকারণে বেধরক মারধরের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।

আসামি আলেয়া বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এই মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং দালাল হিসেবে কাজ করে। সে এর আগে আল ফালাহ, বিজয় নগর, পুরাতন পল্টন এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৮/৩৯ জন নারী এবং ২০২১ সাল থেকে ধৃত আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মোট ১২ জন নারীকে বিদেশে পাঠায়। সে মূলত অন্যান্য দালালসহ গ্রামাঞ্চল থেকে ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে উল্লেখিত এজেন্সির অফিসে নিয়ে আসত। তাছাড়াও ধৃত আলেয়া বেগম বিদেশে যাওয়া ভুক্তভোগী ও পরিবারের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে টিপসই নিয়ে তা পরবর্তীতে নিজেদের সুবিধামতো চুক্তিপত্র টাইপ করে নিতো।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তার আবুল হোসেন ‘কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিক। তারা দীর্ঘদিন যাবত এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সাধারণ লোকজন বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের কাছ থেকে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে প্রসেসিং করে সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠাতো। এছাড়া তারা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে মর্মে স্বীকার করে। অদ্যাবধি তারা প্রায় আড়াই হাজার নারীকে এভাবে বিদেশে পাঠিয়েছে। র‍্যাব ৩ নারীকে সফলভাবে উদ্ধার করে এবং ভুক্তভোগী বাকীদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।