সহজশর্তে বসবাসের অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড ও নাগরিকত্ব) ছাড়াও অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে পর্তুগাল। দেশটিতে বৈধতা কিংবা পাসপোর্ট পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা সহজ হলেও ইউরোপের বাইরে থেকে পর্তুগালে প্রবেশ করা বেশ কঠিন।
বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালসহ অন্যান্য দেশ থেকে পর্তুগালে নাগরিকত্ব কিংবা পাসপোর্ট পাওয়া বেশ কঠিন। এর একমাত্র কারণ, পর্তুগালের আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রক্রিয়া খুবই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি।
অভিবাসন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে বিদেশি দক্ষ-অদক্ষ কর্মী কেউই নতুন করে পর্তুগালে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না। এতেই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল দেশটিতে দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে কর্মী সংকট।
কর্মী সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। বিশেষ করে কৃষিশিল্পের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। কৃষিশিল্পের রপ্তানি আয়ও নিম্নমুখী, গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়িক লোকসান।
অন্যদিকে পর্তুগালে ইউরোপের জনপ্রিয় ও প্রাচীন পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলেও দিন দিন কমছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। ফলে দেশটির আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতকরণ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দক্ষ কর্মীর সংকট কাটিয়ে উঠতে ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার। ঢেলে সাজানো হচ্ছে পর্তুগালে প্রবেশের অনুমতি কিংবা ভিসাব্যবস্থা।
নতুন ভিসাব্যবস্থায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পর্তুগালকে তাদের অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারবেন। কর্মীসংকট সমাধানে ৮০ হাজার ভিনদেশি জনশক্তি নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দেশটির ক্ষমতাসীন সোশ্যালিস্ট পার্টির জনপ্রিয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিয় কোস্তার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি অভিবাসন ব্যবস্থাকে সংস্কার করার প্রস্তাব তোলেন। শুরুতে বিরোধী দলগুলোসহ সাধারণ জনগণ এর বিরোধিতা করলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার যুক্তি-পরামর্শ শোনার জন্য সভার আয়োজন করেন।
সভার পরে বিরোধী দলগুলোসহ দেশটির জনগণ এ প্রস্তাবে সম্মতি দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে আন্তঃসংসদীয় সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, সংসদীয় গণভোটেও এ প্রস্তাব জয় পেয়েছে।
এ পরিকল্পনার জন্য সংসদে এরই মধ্যে নতুন আইন পাস হয়েছে। নতুন এ আইন দেশটির রাষ্ট্রপতি মার্সেলো রিভেইরো সোজার সই ও গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনে অপেক্ষমাণ।
রাষ্ট্রপতি মার্সেলো গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, আগামী সপ্তাহে অর্থাৎ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তার সইসহ আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করবেন। আইনটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেবেন তিনি।
যেসব খাতে দক্ষ কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো হলো- কৃষি, নির্মাণ, মৎস্য উৎপাদন, বনায়ন, পর্যটন খাত, খাবারের দোকান ও ফ্রিল্যান্সার। কর্মী নিয়োগের ভিসা ক্যাটাগরির নাম দেওয়া হয়েছে জব সার্চ ভিসা বা চাকরি খোঁজার ভিসা।
প্রাথমিক পর্যায়ে ভিসাপ্রত্যাশীদের ১২০ দিনের (৪ মাসের) ভিসা দেওয়া হবে, পরে ক্ষেত্র বিবেচনায় ভিসার মেয়াদ ৬০ দিন বা দুই মাস বাড়ানো যাবে। উল্লিখিত খাতগুলোতে কোনো আবেদনকারীর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকলে তাকে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আবেদনের জন্য পর্তুগাল অভিবাসন ক্যাটাগরির ‘ডি’ টাইপ ভিসা আবেদনের চেকলিস্ট অনুযায়ী একই কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। তাতে যুক্ত হবে কারিগরি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সনদপত্র।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আবেদন করতে ‘ডি২’ ভিসা টাইপের ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করতে হবে। অবশ্যই জমা দিতে হবে ফ্রিল্যান্সিং ইনকাম স্টেটমেন্ট।