ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণের ঘোর বিরোধিতা করেছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। তাদের দলসহ দেশের মানুষের ইভিএমে আস্থা নেই দাবি করে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কোনও যৌক্তিকতা নেই। ইভিএমে ভোট হলে আসন্ন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথাও বলেছেন জাপা নেতারা। অবশ্য ইভিএম বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কোনও মন্তব্য করেননি।
রবিবার (৩১ জুলাই) জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে সিইসিসহ অন্য কমিশনার ও ইসি সচিব অংশগ্রহণ করেন।
ইভিএমের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে কোনও আস্থা নেই। মানুষ মনে করে ইভিএমে ভোট পাল্টে দেওয়া হলে কিছু করার নেই। কারণ ফলাফল রি-চেক করা যায় না।’
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের এক্সপার্টদের কথা আমার মাথায় ঢোকেনি। জনগণের আস্থা বিশ্বাস ছাড়া ইভিএম ব্যবহার যৌক্তিক হবে না।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘ইভিএম খুবই কঠিন পদ্ধতি। অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু নিজের নির্বাচনে ইভিএমের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, তার এলাকায় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এর সমাধান কী হবে, কে এটা ঠিক করবে সেই লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইসিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় ইভিএম নষ্ট হলে সেটা আপনারা ঠিক করবেন? না নির্বাচনের অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম করবেন?
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান এক পর্যায়ে ইভিএমের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তাদের মেয়াদকালে ইভিএমে কোনও সমস্যা হয়নি। তারা ৪ থেকে ৫০০ ভোট ইভিএমে করেছে। অবশ্য এই কমিশনারকে থামিয়ে দিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘ইভিএম খুবই স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে যুক্তি দিয়ে লাভ নেই।’
ইসিকে উদ্দেশ করে সংলাপে চুন্নু আরও বলেন, ‘আপনাদের দোষারোপ করে লাভ নেই। রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা না পেলে নির্বাচনে আপনারা অসহায়। সমস্যা আমাদের সিস্টেমের। কিছু সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে যতই শক্ত আইন করা হোক, কোনও লাভ হবে না। নির্বাচনে ভালো হোক, সেটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই চায় না।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ব্যালট পেপারে গ্রহণের দাবি করে চুন্নু বলেন, ‘আমরা চাই ওই নির্বাচনটি ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হোক। নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক।’ নির্বাচন ইভিএমে হলে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নেই বলেও জানান দলটির মহাসচিব।
নির্বাচনের দিন ভোরে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘এখন প্রত্যেকটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কাজেই চাইলে ভোটের দিন সকালেই ব্যালট পৌঁছানো সম্ভব।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতের বেলা ব্যালটবাক্স ভর্তির প্রসঙ্গে টেনে জাপা এমপি চুন্নু বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর প্রস্তাব করছি। তাহলে রাতের বিষয়টি আর আসে না। কিন্তু কাজটা হয়। কী বলবো, এটাও আমিও করিয়েছি। হয় না- এটা ঠিক না।’
জাতীয় পার্টি প্রস্তাবে আরও বলেছে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন, নির্বাচনি কর্মকর্তারা নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ না করে নিজস্ব ক্ষমতাবলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনি খরচ ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে করে ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বকেয়া ইউটিলিটি বিল, ক্রেডিট কার্ডের বিলের জন্য প্রার্থিতা বাতিলের বর্তমান বিধান বাতিল করা; সরকারি কর্মচারীদের অবসরের যাওয়ার পরে সরকারি মালিকানাধীন ও স্বায়িত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের তিন বছর না গেলে নির্বাচন করতে না পারার বিধান করারও প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমাম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।