Can't found in the image content. আরও বাজেট সহায়তা চাইছে সরকার | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

আরও বাজেট সহায়তা চাইছে সরকার

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, জুলাই ৩১, ২০২২

আরও বাজেট সহায়তা চাইছে সরকার

ফাইল ছবি

বহুজাতিক সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে সরকারের। গত তিন অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৫৮৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার বাজেট সহায়তা নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ১৮৬ কোটি ডলার নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে অর্থনীতির ওপর চাপ মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরগুলোতেও সরকারের এ ধরনের ঋণ আরও বাড়বে। বহুজাতিক সংস্থাগুলো যাতে বাজেট সহায়তা অব্যাহত রাখে, সে জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। আগামী তিন অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থা থেকে কমপক্ষে ৭০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বা বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া ঋণ সরকার প্রয়োজন মতো বিভিন্ন জরুরি কাজে খরচ করতে পারে, তাকে বাজেট সহায়তা বলা হয়। এর বাইরে সরকার প্রকল্প ঋণ নিয়ে থাকে। বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকার বহুজাতিক সংস্থা থেকে কম সুদের ঋণ নিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

অর্থ বিভাগের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত বাজেট সহায়তা বাবদ সরকার ৭৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঋণ ও অনুদান পেয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পেয়েছে ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে পেয়েছে ১০৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে পেয়েছে ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে ১৮৬ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী তিন অর্থবছরে সরকার কমপক্ষে আরও ৭০০ কোটি ডলার পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৪৫০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ১০০ কোটি ডলার, বিশ্বব্যাংক থেকে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এসব সংস্থার সঙ্গে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এর বাইরে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে না পারলে বাজেট সহায়তা নিয়ে থাকে সরকার। বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ছে না।

ফলে বাজেট সহায়তা নিতে হচ্ছে। কঠোর সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া না হলে বাজেট সহায়তা নেওয়া বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার সময়ে যেসব বাজেট সহায়তা নেওয়া হয়েছে সেগুলোর উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ এই বৈদেশিক সহায়তা না হলে ব্যাপক টিকাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতো। এখন যেসব ঋণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেখানে দেখতে হবে সরকার কী ধরনের শর্তে এসব ঋণ নিচ্ছে এবং কোথায় বিনিয়োগ করছে। কারণ আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ধরনের ঋণের কিছু সংস্কারের শর্ত দেবে। সংস্কারগুলো ঠিকভাবে করা গেলে সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

মহামারির মধ্যে বৈদেশিক অংশীদাররা বাংলাদেশের পাশে উদারভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দিয়ে এলেও জাইকা সাধারণত এ ধরনের ঋণ দেয় না। তবে সংস্থাটি বাংলাদেশকে দুই দফায় ৬২ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছে, যার পুরোটাই ছাড় হয়েছে। এআইআইবি থেকেও বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এডিবির সঙ্গে সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে তিনটি স্কিমে ১১৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে সংস্থাটি, যার বড় অংশ ছাড় হয়েছে।

গত তিন অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। ৫০ কোটি ডলার ছাড় প্রক্রিয়াধীন। বাকি ৫০ কোটি ডলার এ বছর ছাড়ের আশা করা হচ্ছে। এডিবি থেকে ২৫৩ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছে, যার পুরোটাই ছাড় হয়েছে। এছাড়া ওপেক ফান্ড, কোরিয়ার ইডিসিএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানির কেএফডব্লিউ, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, এএফডি ও আইএমএফ থেকেও বাজেট সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে গত তিন অর্থবছরে বাজেট সহায়তার জন্য বহুজাতিক সংস্থাগুলোর কাছে যেতে হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মহামারি করোনা। করোনার সময়ে টিকা কেনা, ব্যবসায়ীদের সহায়তা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দিতে সরকারকে বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে। কিন্তু ওই সময় রাজস্ব আয় কম হয়েছে। ফলে সরকারকে বাজেট সহায়তা নিতে হয়েছে। এ বছর যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সার, খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের আমদানি ব্যয় ও ভর্তুকি বাবদ ব্যয় বেশি হচ্ছে। কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। এসব বিবেচনায় বাজেট সহায়তা নিতে হচ্ছে।

সূত্র: সমকাল