Can't found in the image content.
জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, জুলাই ২৯, ২০২২
দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ। বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই প্রাকৃতিক আলোয় সব সময় উজ্জ্বল ও ফর্সা থাকে। বর্ষায় মেলে বৃষ্টির ছোঁয়া। আর এখন শীতে মুসল্লিরা উপভোগ করছেন হিমাদ্রির কুয়াশা-শীতলতা। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়ায় মসজিদের অন্দরে অন্দরে; মনে হয় এ এক অপরুপ সৃষ্টি।
নজরকাড়া নকশায় নির্মিত মসজিদটি দেশের অন্যতম স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্য নজির। আর এটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বহুজন ছুটে আসছে। চোখধাঁধানো একটি মসজিদটির নাম— আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি। মসজিদটি অবস্থিত লক্ষ্মীপুরের রামগিত উপজেলার চরাঞ্চলে। রামগতির চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কিল্লা এলাকায়।
শুধু নকশাতেই নয়, এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে— যা দেশের অন্য কোন মসজিদে ব্যবহার হয়নি। চোখেও পড়েনি কখনো। দ্বিতল এ মসজিদে কোনো আলাদা জানালা নেই। মসজিদটি নকশাই এমন চারদিক থেকে কোনো বাধা ছাড়াই আলো-বাতাস প্রবেশ করছে ভেতরে। তবে মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য দুইটি দৃষ্টিনন্দন দরজা রয়েছে।
মসজিদে আসা মুসল্লিরা রোদ-বৃষ্টি-কুয়াশা উপভোগ করতে পারবেন। তবে রোদে গরমে কেউ পুড়বে না, বৃষ্টিতে কেউ ভিজবে না। সবমিলিয়ে মসজিদটি এক অনন্য নিদর্শন— শুধু কৌতূহলের জন্ম দেয়। দিনের বেলায় সামনের পুকুরে পানিতে মসজিদটির প্রতিচ্ছবি এক নিদারুণ সৃষ্টি— যা দর্শকের তৃষিত হৃদয় কেড়ে নেয়।
দ্বিতল এ মসজিদটির নিচ তলা দুই ভাগে বিভক্ত। সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। এর পেছনে মাঝ বরারব গলিপথ। তার দুই পাশে শীতল জলাধার, রোদ আর বৃষ্টির প্রবেশ পথ। মুসল্লিদের জন্য একটি প্রশান্তময় স্থান তৈরি করতেই মসজিদে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। পেছনের অংশে বড় গ্যালারির মসজিদ। যেখানে বসে মুসল্লিরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত করতে পারে। গ্যালারির অংশের পিছন থেকে দোতলায় উঠার সিঁড়ি। দোতলায় রয়েছে নারীদের নামাজ পড়ার স্থান।
এ মসজিদটির ছাদ প্রচলিত স্থাপনার মতো না। পুরো মসজিদের দেয়ালে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়— পুরো দেয়াল ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে রয়েছে রড সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রনে আরসিসি ঢালাই। পুরো মসজিদে এক সঙ্গে ৪০০ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। নিয়মিত নামাজের পাশাপাশি ঈদগাহ হিসেবেও ব্যবহার করা হবে আস সালাম মসজিদ। এছাড়াও প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর আগত শিশু ও মুসল্লিদের মাঝে মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন খাবার বিতরণ করা হয়।
জানা গেছে, চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কিল্লা এলাকায় স্থাপিত আস-সালাম জামে মসজিদটি গত একশ বছরের মধ্যে দেশের মধ্যে একটি বিরল স্থাপনা। স্থানীয় রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের উদ্যোগে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ আর জনহিতকর কাজের অংশ হিসেবে এটি স্থাপন করা হয়। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরপরই ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি’ পাওয়ার জন্য মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয়েছে। এটি আধুনিককালে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপনা বলে দাবি করছেন স্থপতি ও দর্শনার্থীরা।
ট্রাস্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মসজিদটির নকশা তৈরিতে বাংলাদেশীয় একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান এবং সাথে ছিল বিদেশী কয়েকজন স্থপতি। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রায় ৪ হাজার বর্গফুট দোতলা এ মসজিদ নির্মাণে ব্যয়ভার বহন করেছে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। এ মসজিদকে ঘিরেই আস-সালাম হাফেজিয়া মাদরাসা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে কোরআনে হাফেজ ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আর্ন্তজাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষা কমপ্লেক্সের অধীনে একটি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে মসজিদ নির্মাণ ও শিক্ষা কমপ্লেক্স নির্মাণ করলেও প্রতিষ্ঠাতা পুরোপুরি প্রচারবিমুখ। এজন্য তার বক্তব্য উপস্থাপনে নিষেোজ্ঞা রয়েছে। তার মূল লক্ষ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তিনি আল্লাহকে খুশি করতেই মানুষের জন্য কাজ করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যে, রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি তার বাবা মায়ের নামেই ট্রাস্টটি গঠন করেন। এর মাধ্যমে তিনি জনহিতকর কাজ পরিচালিত করে আসছেন। এ মসজিদটি তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। এছাড়াও এখানে আর্ন্তজাতিকমানের একটি হাফেজিয়া মাদরাসা, একটি গার্ল স্কুল এবং একটি কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, মসজিদ নির্মাণ ছিল প্রথম উদ্যোগ। দ্বিতীয় উদ্যোগে মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে। এখন গার্লস স্কুলের কাজ চলছে। ২০২৩ সালের মধ্যে তা চালু হবে। এর ২-৩ বছরের মধ্যে একটি কলেজও চালু করা হবে। এরমধ্যে হাফেজি এবং ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসাটি ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে। এতে প্রতি ব্যাচে এতিম ছাত্রদের থেকে ৬০ জন ছেলে, ৪০ জন মেয়ে এবং ২০ জন হাফেজ হবেন।
মাদরাসা সূত্র জানিয়েছে যে, ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে হাফেজি মাদরাসাটি চালু করা হয়েছে। এতে পড়তে যোগ্যতা লাগবে মেধা, কোনো অর্থ লাগবে না। মাদরাসাটিতে আরবির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হবে। এ মাদরাসা থেকে যেই হাফেজ হবেন তিনিই বিশ্বের যেকোন দেশে ইংরেজি ভাষায় গর্বের সহিত বক্তব্য প্রদানে সক্ষম হবেন। প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও উন্নতমানের।